নীতি
নীতি
না ক’রে যে পেতে চায়
দুঃখ তা’র পিছে ধায়। ১।
ভাবে বলে করে না
তা’র কেউ ধারে না। ২।
‘হাঁ’ বলাকে এড়িয়ে চলে
পারার ঝোঁকটি পড়েই ঢ’লে। ৩।
‘না’র সাথে যা’র কোলাকুলি
‘না’র বুকেতে পড়েই ঢুলি’। ৪।
ভাবে কয় করে না
আশা তা’র ফলে না। ৫।
দোষ-দেখা ঝোঁক গজালে ওরে
সেই দোষেতেই ধরবে তোরে। ৬।
শূন্যে যা’রা ঝোলে
পড়েই মাটির কোলে। ৭।
বলায় পটু কাজে কম
নিজেই হয় নিজের যম। ৮।
স্বভাব-দোষেই অভাব ঘটে
সৎক্রিয়তায় বিভব বটে। ৯।
সৎক্রিয়তার বাড়া ঝোঁক
নিপাত যাক্ অভাব-রোগ। ১০।
কর্জে দান সঙ্গতি নাই
বাড়বে শুধু ব্যর্থতাই। ১১।
গোলামী করে বইলে জীবন
বংশ লোভী নয় বিচক্ষণ। ১২।
গোলামী করে বইলে জীবন
বংশ হারায় চক্ষী চলন। ১৩।
ভাল কয়, ধরে না
দুর্দশা ছাড়ে না। ১৪।
মান ভয়ে যা’র কপট চলন
থামেই কিন্তু তা’র উন্নয়ন। ১৫।
বিপদ-কালেই আপদ-নীতি
তা’ বিনে সে মরণ-নীতি। ১৬।
পেতে চাস্ তো দিতে থাকিস্
যে-অবস্থায় যেমন পারিস্। ১৭।
বিপদ ভেবেই ঘাড়ে যায়
জানিস্ আপদ্ তা’রেই খায়। ১৮।
যেটা নাই পেতে চায়
লোকে বেশী কয় তা’য়। ১৯।
অপাত্রে অযোগ্যে দান
দাতা গ্রহীতা দুই-ই ম্লান। ২০।
কর্মহীন চিন্তা সৎ
পাথর-বাঁধা নরক-পথ। ২১।
শ্রদ্ধা-তপে যোগ্য যা’রা
দাবীর পূরণ পাবেই তা’রা। ২২।
অকৃতজ্ঞ দুর্ব্বলের
সমর্থনই হয় পাপের। ২৩।
মননে করণে মিতালি নাই
খাঁকতি জ্ঞানের সর্ব্বদাই। ২৪।
পণ করে নেয়, দেয় না
শতেক দিলেও পায় না। ২৫।
বৃদ্ধিতে যা’ হানি আনে
টেনে নেয় তা’ নরক পানে। ২৬।
অপাত্রে দান সিদ্ধ নয়
ওতে কিন্তু বাড়ায় ভয়। ২৭।
লাভ না দিয়ে চাওয়ার দাবী
খাওয়ায়, খায় সে স্বতঃই খাবি। ২৮।
কথায় নীতি, কাজে নয়
ভণ্ডামিতেই তা’র ক্ষয়। ২৯।
না ভজালে নিন্দা-ঘোঁট
ধরে বিপাক, করে জোট। ৩০।
স্বভাব-গুণেই অভাব নষ্ট
এটা কিন্তু খাঁটি স্পষ্ট। ৩১।
পারাতে সন্দেহ যার
সে কি কভু করে?
পারগতা দূরে যায়
পথ যায় স’রে। ৩২।
বিপদে যদি বাঞ্ছা থাকে
বিপন্নতায় টান,
ভাল দেখে কাতর হ’তে
হ’য়ো রে আপ্রাণ। ৩৩।
যে-সংস্রবে শরীর-মনে
তোমার যেমন হয়,
অপরেরও ঠিক তেমনই
জেনো তা’ নিশ্চয়। ৩৪।
অর্জ্জী যদি নাই হ’লি তুই
ভালমন্দ কী?
বিদ্যাবুদ্ধি লাখ থাকুক না
ছাইয়ে ঢালা ঘি। ৩৫।
হয় না যা’র-
পায় না সে,
ব্যর্থ জীবন
হা-হুতাশে। ৩৬।
অভাব যদি সুভাব ভাঙ্গে
ভাবটা হ’ল কী?
ভাবের নামে করলি যা’ তুই
ঢাললি ছাইয়ে ঘি। ৩৭।
যেথায় যেটুক বললে তুমি
ফল পাবে সুন্দর,
সেইটুকুই তো ন্যায্য বলা
নইলে অবান্তর। ৩৮।
কী চাস্ আগে ঠিক ক’রে নে
দ্যাখ্ সোজা পাস্ কী করে,
ওরে পাগল, বৃত্তি-মাতাল!
সৎভাবে চল্ তা’ই ধ’রে। ৩৯।
পথ খুঁজে তুই কাল হারালি
অনুষ্ঠানের মহড়ায়,
অনুষ্ঠানই বসলো পেয়ে
পাওয়া গেল গোল্লায়। ৪০।
বিধির নিয়ম পালবি যেমন
যতটা বা যতটুকু,
কেটে-ছেঁটে সব মিলিয়ে
পাবিও ফল ততটুকু। ৪১।
হিতের পথে মিষ্টি বোল
সুকৌশলী সমাধান,
সহ্য করে কৃতী হওয়াই
কর্মফলের অবসান। ৪২।
কারু স্তুতি করবে না যে
আপন কথায় ব্যস্ত,
হামবড়ায়ী আহম্মক সে
সকল সময় ত্রস্ত। ৪৩।
যা’-যা’ ক’রে চললে ভাল
সেই চলনে ধা’-
অমনতর ঠিক চলনে
আসেই সুবিধা। ৪৪।
প্রতিযোগিতায় ইতর অহং
মাথা তুলেই রয়,
প্রতিপূরণে আত্মপ্রসাদ
চিত্তপ্রসার হয়। ৪৫।
তালিম মত তাল মিলিয়ে
না চললে কোন তালে,
করার ফলটি শুকিয়ে
ওঠে ‘না-পাওয়া ঘটে ভালে। ৪৬।
আগের করা কর্ম যত
প্রসব ক’রে ফল,
ধায়ই জানিস্ জীবের পিছু
দিয়ে বলাবল। ৪৭।
আলোচনায় বুঝ-মীমাংসা
চাহিদা ওঠে জেগে, —
পাওয়ার মতন কৰ্ম্ম করায়
আগ্রহ ছোটে বেগে। ৪৮।
পাওয়ার ধ্যান তুই যতই করিস্
করার তপটি বাদ দিয়ে,
পাওয়ার আশা বন্ধ্যা ততই
নাকাল হ’বি খেদ নিয়ে। ৪৯।
সব সময়েই ভাল কথায়
হয় না সবার আনতি,
যদি তা’দের নাই রে থাকে
মন-অবস্থার সঙ্গতি। ৫০।
প্রয়োজনে সুবিধা নেয়
স্বার্থে ক্ষতি করে,
অকৃতজ্ঞ এমন হ’তে
থাকিস্ দূরেই স’রে। ৫১।
পাওয়ার দিকে ঝোঁক দিলে
তোর করার নেশা টুটবে,
করার দিকে ঝোঁক দিলে
তোর আপনি পাওয়া ফুটবে। ৫২।
আপদ-ধর্ম্মে বইলে জীবন
বিপদ-পায়েই থাকতে হয়,
সুপথ থাকে দূরেই স’রে
মরণ গাহে যমের জয়। ৫৩।
করার রোখটি বৃত্তি-মায়ায়
রুদ্ধ হ’য়ে পড়ে,
অভীষ্ট তা’র হয় না পূরণ
দুঃখ তা’রেই ধরে। ৫৪।
তা’তেই শুধু অবাধ তুমি
যা’তেই ভাল হয়,
পারই না তা’ করতে যা’তে
পরের আনে ক্ষয়। ৫৫।
শুনেই বুঝিস্ করলে কিবা
হয় বেদনার ক্ষয়,
মন না বুঝে করলে সেবা
সবই ব্যর্থ হয়। ৫৬।
লাখ ধান্দায় মনটি ব্যস্ত
ইষ্ট-ধান্দাই বইলি না,
তবুও চাস্ বিধির দয়া
মতিচ্ছন্ন বুঝলি না! ৫৭।
বেকুব বিবেচনার ফলে
অশুভ পণ করিস্ যদি
করিস্ নে তা’, বিনিয়ে বলিস্-
রাখিস্ মনে নিরবধি। ৫৮।
কথাই দাও আর পণই কর
বুঝেই ক’র তা’,
বেচাল কওয়া, বেকুবী পণ
আনেই শঠতা। ৫৯।
প্রতিজ্ঞা যদি ক’রেই থাকিস্
যদি তা’ সৎ হয়,
প্রাণপণেতে পালবি সেটা
পাবি ওতেই জয়। ৬০।
সামর্থ্যে তোর সজাগ থেকে
দায়িত্ব নিবি যত,
জীবন হবে সহনপটু
হবিই রে উন্নত। ৬১।
দোষদৃষ্টি রাখলে পুষে
ভাবনা কিসের আর?
সত্বরই তুই শিকার হবি
ব্যর্থ প্রহেলিকার। ৬২।
কৰ্ম্মকে যে খেলিয়ে নিয়ে
ফলেই করে সমাহার,
এই ঝোঁকেতে চলন যাহার
ফলই ধারে তাহার ধার। ৬৩।
পারবি রে তুই কী?
কারু ভাল করবি না তুই
কথার চমকি-
পাওয়ার বেলায় ন্যায়পরতা
কেবল ঝক্ঝকি ! ৬৪।
যা’ ইচ্ছা তাই করবে তুমি
তা’ কিন্তু রে চলবে না,
ভাল ছাড়া মন্দ করলে
পরিস্থিতি ছাড়বে না। ৬৫।
সাশ্রয়ে যে কাজ করে দেয়
সুষ্ঠু সমাপন,
মন্দ দলি’ খ্যাতি রটায়
হিতার্থী সে-জন। ৬৬।
সন্দেহেতে দোদুল চিত্ত
ভেবেই দেখে দোষ,
আপদ-বিপদ আনেই ডেকে
কী আছে আপসোস?। ৬৭।
বিপদ বাধা অন্তরায়ের
কাঁটায় ভরা ভেবেই পথ,
থেমেই যদি যাস্ রে ওরে
ভাবিস্ পূরবে মনোরথ? ৬৮।
শোনা কথায় চললে শুধু
তবেই কিন্তু ঠকবি,
কাজ-কর্ম্মে দেখবি
যাহা বুঝলি, সেটাই ধরবি। ৬৯।
মরণ-সমর মথন করে
সামাল দিয়ে সকল দিক,
দ্রষ্টা ঋষিই বক্তা নীতির-
নীতিই জাতির বাঁধন ঠিক। ৭০।
উচিত-বাদের দম্ভ কর
হিতের ধারটি ধারছ না,
এমন চলায় চললে জেনো
পাবেই পাপের লাঞ্ছনা। ৭১।
দিতে চেয়ে স্বার্থ-নেশায়
করে প্রবঞ্চনা,
দুঃখ তাহার দারুণ বেগে
আনেই লাঞ্ছনা। ৭২।
পালক যে তোর সাশ্রয়ে সে
উচে ওঠে সেইটে কর্,
না করলে তোর বাঁচা-বাড়া
ক্রমেই যাবে যমের ঘর। ৭৩।
লোকের করায় চ’লছ বেঁচে
এটাও যেমন সত্য,
তোমার করাও তেমনি তা’দের
বাঁচা-বাড়ার পথ্য। ৭৪।
যা’রই রে তুই খেয়ে মানুষ
ধারিস সদাই তাহার ধার,
দুর্ব্বিপাকে অমনি যাবি
চাওয়ার আগেই করবি তা’র। ৭৫।
জীবন-চলায় স্বাধীন তুমি
মরণে কিন্তু নয়,
মরণ-চলন সংক্রমণে
অন্যেরও হয় ক্ষয়। ৭৬।
কামিনী-কাঞ্চন নয় রে দোষের
প্রেষ্ঠ-স্বার্থী যদি হয়,
প্রেষ্ঠ-স্বার্থে আনলে ব্যাঘাত
ত্যাগই কি তা’র উচিত নয়?। ৭৭।
বিশিষ্টকে করলে বাতিল
যম-বাঘা সব পিছু ধায়,
চলার পথে বিনা বাধায়
ঘাড় মটকে রক্ত খায়। ৭৮।
হোস্’না রে তুই কৃপণ-স্বভাব
করায় করবি পণ,
কৃপণতায় কাছিম করে
পড়শী-বিরাগ-মন। ৭৯।
ফলের নেশায় করলে রে কাজ
করার ঝোঁকটা হয় শিথিল,
নিষ্ফলতা মুচকে হেসে
বেকুব বুদ্ধি করে হাসিল। ৮০।
গণকে যদি গুরুর পূজায়
বাড়িয়ে তুলতে পারিস্,
সাফল্য তোর সামগানেতে
ভ’রেই তুলবে দিশ্। ৮১।
হামবড়ায়ী স্পদ্ধী নেশার
যখনই যে ব্যাঘাত হানে,
তখনই তা’ মুষড়ে গিয়ে
ফোলেই ক্রোধে অভিমানে। ৮২।
ভাল-প্রয়াসী মন্দ যা’
সেও তো ভাল ঢের,
ভাল-মুখোসে মন্দ ঘৃণ্য,-
লোকে পায় না টের। ৮৩।
অর্থ যখন সবার স্বার্থ
বিশিষ্টতায় করে পূরণ,
সাম্যে ভরা সেই নীতিটা
সাম্য-নাচেই নাচে তখন। ৮৪।
উদ্ভাবনী বুদ্ধি-হারা
একঘেয়ে যা’র উপার্জন
যোগ্যতাহীন বুদ্ধি বেকুব
সেই মানুষই হয় কৃপণ। ৮৫।
চিন্তা যদি একপেশে হয়
সঙ্গতি সব বাদ দিয়ে,
বুঝের মাথা ঘায়েল ক’রে
আসবে দম্ভ অবুঝ নিয়ে। ৮৬।
রোগ বা বিশেষ কারণ ছাড়া
কর্তা, চাকর আর স্বজনে
সমান খাবার, ন্যায্য তোষণ-
চলেই এমন শ্রেষ্ঠগণে। ৮৭।
একের স্থিতি অন্যের টানে
অন্যে একের পানে,
এমনি করেই সত্তা সকল
চ’লছে র’য়ে স্থানে। ৮৮।
যা’ পেয়ে যে বাঁচাবাড়ার
চলায় যত উন্নত,
তা’ই বুঝে তা’ করলে রে দান
সার্থক সে দান হয় তত। ৮৯।
বড়র মত চাল মারিস্ তুই
চালিয়াতি চাল ধ’রে,
অভ্যাস, ব্যবহার, দক্ষতা আন্-
নইলে বড় কী করে ? ৯০।
এক লহমার বেফাঁস কথা
চিন্তা, কৰ্ম্ম, আলোচনা,
ছোটেই নিয়ে পিছু-পিছু
দুরদৃষ্টের কী লাঞ্ছনা!। ৯১।
বিধির নীতির একটু ব্যাঘাত
একটু অবহেলা তা’র,
আকাশ-পাতাল তফাৎ করে,
দুঃস্থি আনে অবস্থার। ৯২।
শ্রেষ্ঠ জনে করলে প্রণাম
নিয়ত মাথা ঠেকিয়ে পায়,
নিজের ভাল হ’লেও কিন্তু
তাঁ’র আয়ুটি ক্ষয়েই যায়। ৯৩।
এমন তাপের করবি সৃজন
অত্যাচারের হয় নিকেশ,
অনুতপ্ত অত্যাচারীর
রয় না যা’তে পাপের লেশ। ৯৪।
যে দায়িত্ব নেবে
যাহার ঝটিতি কর তা’,
কথা দিলেই করবে
যা’তে রয় না কৃতঘ্নতা। ৯৫।
যুক্তি-কারণ না বাতলে তুই
উড়িয়ে দিস্ না কারু কিছু,
বাতলে শুভ মন্দে বাতিল
করলে আসে শুভই পিছু। ৯৬।
পুরাতনের চর্যা নিয়ে
নূতনে ক’রে স্থিতি,
আদর্শেতে চলবি সাধু-
এই তো চলার নীতি। ৯৭।
দান করে যে হরণ করে
কিংবা বেশী লয়,
কুহক-ঝরা কুদিন এসে
সকলই করে ক্ষয়। ৯৮।
বিধি কিন্তু নয়কো জ্ঞানী,
নয়কো জ্যান্ত, নয় চেতন-
ইষ্টানুগ বেত্তা-জ্ঞানীর
জ্ঞানেই বিধির নিয়ন্ত্রণ। ৯৯।
বিধির নীতির একটু বেচাল
একটু বেসামাল,
দক্ষতাহীন শিথিল চলন
ভাঙ্গেই জীবন-তাল। ১০০।
নিন্দা-কথায় কান দেয় যে
মোকাবিলায় মিলায় না,
অনাহূত পাতিত্য পায়
শুভ তা’রে চালায় না। ১০১।
জীবনধারার সহজ ঝোঁকেই
ধ’রে চলা নীতির পথ,
বৃত্তিমুখর প্ররোচনা
বাঁকিয়ে ধরায় নীতি অসৎ। ১০২।
অসৎ কৰ্ম্ম করবি না
আর প্রায়শ্চিত্তে শুদ্ধ হ’বি,
এই নীতিতে অপকর্মীর
পরিত্রাণে যত্ন ল’বি। ১০৩।
কারু বিষয় ভালমন্দ
বুঝলেও কিন্তু মনে বেশ,
বলতে বলিস্ হিসেব করে
নইলে পাবি শুধুই দ্বেষ। ১০৪।
কাজ ও কথায় অমিল যেথায়
লোক-ভাঁড়ান গোপন চলন,
এমন চলায় নিছক জানিস্
লুকিয়ে আছে কুটিল পতন। ১০৫।
ভাল বললেও উল্টো বোঝে
রূঢ় ভাষায় প্রতিদান,
স্বর্গও যদি মর্ত্যে আসে
তৃপ্তিতে তা’র নাইকো স্থান। ১০৬।
কুহক-বিধুর কৃতজ্ঞতা,
ন্যায়পরতা, নীতির টান,
ইষ্টহারা অনর্থেতে
করেই জীবন অবসান। ১০৭।
মিত্রদ্রোহী কৃতঘ্ন যে
বিশ্বাসঘাতক,
তা’র সঙ্গ সাহচর্য্য
অনন্ত নরক। ১০৮।
যেমন করায় যা’ ফল মেলে
তেমনি যদি না কর তা’,
প্রাপ্তিপথে ব্যাঘাত আসে
দুঃখ-সহ ব্যর্থতা। ১০৯।
চিন্তাগুলি কৰ্ম্মে যতই
বিচ্ছুরিয়ে মূর্ত হয়,
মগজটা তোর অমনি হ’লেই
উত্তেজনা-মুক্ত রয়। ১১০।
উপদেশ আর বুদ্ধিদানই
আত্মপ্রসাদ যা’র আনে,
রিক্ত-কৰ্ম্মা এমন জনার
সার্থকতা নাই প্রাণে। ১১১।
যে সময়ে লাগবে যা’-যা’
গুছিয়ে আগেই ব্যবস্থিতি,
করে সদা তৈরী থাকা
দক্ষকৃতীর স্বভাব-নীতি। ১১২।
অর্জনাকে বাড়তি রেখে
ব্যয়টাকে কর নিয়ন্ত্রণ,
এমনতর চলিস্ যদি
চলনা পাবে স্থিত-চলন। ১১৩।
বুকের পাঁজর চূর্ণ করেও
সুখী করার সব প্রয়াস,
এক লহমার চলা-বলা
ঘৃণ্য হ’লেই সব নিকাশ। ১১৪।
সজাগ সন্ধিৎসা নিয়ে
চলাই ভাল সর্ব্বদাই,
কোন্ অবস্থায় কীই বা ভাল
আগাম ভেবে করবি তা’ই। ১১৫।
শাস্তি দেওয়ায় শান্তি যদি
নাই আনতে পারে,
মাছি-বওয়া সংক্রমণায়
শাস্তি ছিটবে না রে ? ১১৬।
তাচ্ছিল্যই যদি থাকে —
অবুঝ হ’তে ভাবনা কিসের?
ব’সে পাবি তুই তা’কে ! ১১৭।
যে-ভাব নিয়েই থাকিস্ না-
সেই ভাবেরই দক্ষতাতে
চল্’বি রে তুই জানিস্ না? ১১৮।
স্মৃতির বুকে অযুত নীতির
হীরক-মাণিক জ্বলে
সেইটি বুঝে কুড়িয়ে পড়িস্
সুফল যা’তে ফলে। ১১৯।
অস্তিত্ব সহ আদর্শকে
সার্থক পূরণ করে,
এইটি বুঝে কহিস্ করিস্
ঠকবি নাকো পরে। ১২০।
পাওয়া-দেওয়ার মাঝখানে-
চলে জীবন পুষ্টি পেয়ে
স্বস্তি-পায়ে-সাবধানে। ১২১।
শোক যদি রে তুলতে পারে
করায় বলায় স্বর্গপানে,
তবেই তা’কে রাখবি ধ’রে-
নইলে ছিঁড়িস্ সটান টানে। ১২২।
‘না’ সুন্দরী বধূ যা’র
‘হয় না’ যা’র শালা,
অলক্ষ্মী তা’র ঘরে গিয়ে
সব করেছে কালা। ১২৩।
তামিলদারী বুদ্ধি যাহার
পুষ্টপ্রখর ক্ষিপ্র হয়,
হুকুমদারী তা’রই সাজে
শক্তি গাহে তা’রই জয়। ১২৪।
গুণগ্রাহিতা-মুখর হ’য়ে
স্নেহপূর্ণ শাসন সেবায়,
সুফল চলায় জীবন চলে
দাঁড়িয়ে দীপন প্রতিষ্ঠায়। ১২৫।
ভাবের আবেগ রুদ্ধ হ’য়ে
অভিব্যক্ত নাই হ’লে,
ভাবটা যে তোর নিথর হবে
উঠবে না স্বভাব ফলে। ১২৬।
লোক-ক্ষুধা মিটল রে যেই
আদর-সেবা করলি না,
মর্য্যাদা যে ডুবল রে তোর
সম্পদে পা ফেললি না। ১২৭।
উৎস যা’ তোর রক্ষণা
তা’র সুখ-সুবিধার চেষ্টা
যেই হারালি, ভর-জীবনে
ঘুচবে না তোর তেষ্টা। ১২৮।
ইষ্টাদর্শে পায়ে দ’লে
যেই গোলামী ভজে-
জীবনপথে হরেক কাঁটা
লোভে বংশ মজে। ১২৯।
সুচিন্তাতেই বিভোর র’লি
করলি না তো কাজে-
নরক-পথটি শ্বেত পাথরে
বাঁধলি ব’সে বাজে! ১৩০।
কোন-কিছুর ভারটি নিয়ে
যদিই তা’ শেষ করতে নারিস,
না-পারায় তুই বিবশ হ’য়ে
ভূতের মত ছুটবি জানিস্। ১৩১।
নীতি দাবী করে না কারু
স্বস্তি-নেশাই নীতিকে ডাকে,
নীতি ধ’রেই বাঁচা, বাড়া
ওঠেই বেড়ে বাধার ফাঁকে। ১৩২।
ইষ্টস্বার্থ অটুট রেখে
যে-কর্মেই না জুটলি,
সেবার পরশ পেয়েই তেমনি
গোলামিত্বে টুটলি। ১৩৩।
জন্ম নেছ একা কিন্তু
পরিস্থিতির মধ্যে,
বাঁচা-বাড়া রয়েছে তাই
তাহাদেরই সাধ্যে। ১৩৪।
ভৃত্যেরে তুই ভাবলি আপন
ভর্তারে বাদ দিয়ে?
ভর্তারই দান ভৃত্যে জোগায়
দেখ কৃতঘ্ন চেয়ে! ১৩৫।
যা’ ব’লে কিছু নিবি কারু
করবি হ’য়ে অকপট,
না করলে তুই ঝুলিয়ে দিলি
লাভের পথে অন্ধপট। ১৩৬।
অসৎভরা অন্যায় যা’
উৎখাতে তা’র পুণ্য তোর!
প্রশ্রয় বা ঔদাসীন্যে
জানিস্ কিন্তু নরক ঘোর। ১৩৭।
কস্’রতে সংযমী যেই
হ’তেই যাবি তুই,
কোন্ ফাঁকে তা’র বাঁধন ভেঙ্গে
ফেল্’বে তোরে নুই’। ১৩৮।
কৃতজ্ঞতা ভুল হ’য়ে যায়
স্বার্থে অন্যায় দাবী,
উপকারীতে নাই অনুকম্পা
মিত্রে সন্দেহ-ভাবী,
বৃত্তিস্বার্থ ফুরিয়ে গেলে
সম্বন্ধ মিটে যায়-
এমন দেখলে বুঝে চলিস্
ছোঁয়াচ না লাগে গায়। ১৩৯।
যে-চাহিদায় ঝুঁকবি রে তুই
সেইটিই মন ভাববে,
যা’ ক’রে তা’ পেতে পারিস্
তা’ থেকে কিন্তু সরবে,
পেতেই যদি চাস্ রে পাগল
সেইটি তবে কর,
যে-করাতে ঝোঁক দিলে তোর
পাওয়াই হবে বর। ১৪০।
খুঁজিয়া জীবনী যত পাঁতি-পাঁতি করি’
সুবিচারে ভাল-মন্দ করিয়া বিচার,
নিজের জীবনটাকে উপযুক্ত করি’
প্রস্তুত থাকিও ভ্রমে পাইতে নিস্তার। ১৪১।
ভাবা যা’ তা’ ফুটলে করায়
প্রকৃত তখন হয়,
প্রকৃত হ’লেই জানিস্ ওরে
পাওয়ার উপচয়;
প্রকৃত যদি নাই হ’লি তুই
পাওয়া হবে না তোর,
ভাবের জলে তৃষ্ণা কি যায়?
তৃষ্ণায় রইবি ভোর ! ১৪২।
#Anusruti Part 1 #Niti
সন্তানচর্য্যা
আর্য্যনীতির দশ রকমের
সংস্কারেরই এমনি রীতি,
উপ্তি হ’তে খতম অবধি
পুষ্টি পোষণ সংস্কৃতি;
যে-সময়ে যে-বয়সে
যে-সংস্কার মাথা তোলে,
অনুষ্ঠানের ভিতর-দিয়ে
জাগায় তা’রে শিষ্ট রোলে;
তা’র ফলেতে তেমনি ঝোঁকের
পায়ও এমনি রসাল গতি,
অভ্যাসে আর দক্ষতাতে
শ্রেষ্ঠ সবল হয় সন্ততি । ১।
জন্মযুত সংস্কার সব
শিশুর মাথায় ঘুমিয়ে রয়,
পারম্পর্য্যে সময়-মাফিক
ফাঁকে-ফাঁকে হয় উদয়;
পরিস্থিতির সাড়া পেয়ে
শিশু যেমন বৃদ্ধি পায়,
দেহ-মনের বৃদ্ধিক্রমে
সংস্কারও তেমনি গজায়। ২।
যে-বয়সে যে-সময়ে
যে-সংস্কার হয় উদয়,
সেইটি ধ’রে অভ্যাসেতে
না ধরালে উবেই ক্ষয়;
তারপর তুই যতই করবি
ধ্বস্তাধ্বস্তি শাসন-রাগ,
ভয়ে বালক শীর্ণ হবে
বিরক্তি না মানবে বাগ । ৩।
জন্ম হ’তে পাঁচ-সাত বছর
একীবদ্ধ সম্বেগবেগ,
ছেলেপুলের অন্তরেতে
প্রায় চলে হ’য়ে সবেগ;
এরই ভিতর যে-সম্বেগ
যেমনভাবে মাথা তোলে,
তা’রই তেমন নিয়মনে
জানার দীপ্তি তেমনি খোলে;
ও-বয়সে মায়ের কাছে
ছেলেপুলে থাকবে যত,
মায়ের সূক্ষ্ম সম্পোষণে
সংস্কার হবে দক্ষ তত । ৪।
প্রসব করা কঠিন যদিও
সন্তান-পোষণ সহজ নয়,
সন্ধিৎসাসহ বুদ্ধিমতী
দক্ষনিপুণ হ’তেই হয়;
অভ্যাস-ব্যবহার এস্তামাল
সেবানিয়মন দায়িত্ব-বুদ্ধি,
এ না থাকলে সব মেয়েরই
সন্তান-প্রসবে নাইকো শুদ্ধি;
তাইতো বলি মেয়ে আমার !
মায়ের আসন নেবার আগে,
উমার মত ওঠ গজিয়ে
দুনিয়া সাজা তেমনি রাগে । ৫।
দুষ্টু ছেলে হোক না যতই
জানিস্ ওটা ততই ভাল,
মায়ের প্রতি টানটি ছেলের
থাকলে অটুট আর ঝাঁঝাঁল;
মায়ের একটু প্রীতির আশে
করতে নারে এমন কাজ,
ভাবতে নারে আছে জগতে
সেই তো হ’ল মহান ধাঁজ ! ৬।
সৎখেয়ালে সাধুবাদে
নিয়ন্ত্রণে বাড়াস্ রোখ,
অসৎ হ’লে রকম দেখে
দিস্ ঘুরিয়ে ছেলের ঝোঁক । ৭।
শিশু যখন আধবুলিতে
যে-লক্ষ্যেতে যা’-যা’ কয়,
তা’ না বুঝে চাপান কথায়
আনেই বোধের বিপর্যয় । ৮।
দেখো দেখো লক্ষ্মীছেলে
একটুও কিন্তু কাঁদে না,-
এমন বলায় প্রায় ছেলেই
বায়না তেমন ধরে না। ৯।
স্বাস্থ্য ক্ষিধে বুঝে তবে
ছেলেপুলের খাদ্য দিবি,
ও না হ’লেই জানিস্ সেধে
রোগের পূজোয় দিন যাপিবি। ১০।
যে-আচারে স্বাস্থ্য প্রতুল
মায়ের আচার তেমনি হ’লে,
সৎচলনে পাল্’লে ছেলে
অটুট স্বাস্থ্য তবেই ফলে। ১১।
অনুসন্ধিৎসা থাকলে মায়ের
সাহচর্য্য, দক্ষ সেবা,
সন্তানের ঝোঁক সেই পথেতেই
উঠবে ফুটে, রুখবে কেবা ?। ১২।
যে-সময়ে যে-বয়সে
সংস্কার-ঝোঁক যেমন ফোটে,
তৎক্ষণাৎই সেইটি ধ’রে
অভ্যাসে দক্ষ করতে হয়,
এর অভাবে ছেলেপিলের
এমনতরই কাণ্ড ঘটে,
উবে গিয়ে সংস্কার-ঝোঁক
সে কাজ করতে আসে ভয়। ১৩।
পুষ্টি সহজ-স্ফূর্ত্তি মনের
বাহ্যিনিঃস্রাব স্বাভাবিক,
ক্ষুধাতৃষ্ণা সহজ মত
সুস্থ ছেলে বাস্তবিক। ১৪।
লোভ দেখিয়ে সেবা নেওয়া
ছেলে-মেয়ে-সন্তানের,
মাতাপিতা-গুরুজনের–
এমনি ডাকটি সব নাশের;
দক্ষ আবেগ পাওয়ার লোভে
লভে নিরোধ, মিয়িয়ে যায়,
অপটুত্ব রাহুর মত
সব কাজে তার পিছু ধায় ! ১৫।
গুরুজনে সন্তানে তোর
কুকাজে যদি শাসন করে,
ছেলের পক্ষ নিবি নাকো
বুঝাস্ সমবেদন ধ’রে;
অমন স্থলে তা’র সমর্থন
ঘায়েল করে ছেলের জীবন,
কুকাজে রতি হয় স্বাভাবিক
চায় না কভু আসতে বরে;
ছেলের যদি দোষও না হয়
তবুও বুঝিয়ে বলবি তা’কে,
না-বুঝানোর দোষ করে তুই
তা’তেই কিন্তু পড়বি পাকে। ১৬।
পারে না ছেলে এমনতর
বুদ্ধি ও ভাব এনে ফেলে,
মাথায় কিন্তু নেই ধরাতে
ওতেই জানিস নষ্ট ছেলে। ১৭।
পরের ব্যথায় সমবেদনা
যা’তে গজিয়ে ওঠে বুকে,
তা’র পূরণে প্রশ্রয় পায়
করিস্-বলিস্ তেমনি মুখে । ১৮।
পালন না করে নীতি-বাক্য
শুনিয়ে ছেলেয় যানে থেমে,
এতে কিন্তু ছেলেপুলে
ইতরামিতে চলেই নেমে। ১৯।
ভাল কিছু করতে গিয়ে
আসে যদি হ’টেই ছেলে,
এমনি করে উস্কে দিবি
বাহবা নিতে ক’রেই ফেলে । ২০।
অভ্যাস-ব্যবহার পছন্দ-ঝোঁক
ছোট হ’তেই সতের দিকে,
নিখুঁতভাবে এস্তামালে
স্বভাবটিতে দিবি এঁকে। ২১।
আধকথার সময় হ’তেই
ক’রে করিয়ে যা’ শেখাবি,
সেইটিই হবে মোক্ষম ছেলের
হিসাবে চল্, নয় পস্তাবি। ২২।
খারাপ দিকে অবাগ রোখ
ছেলের যদি দেখতে পাস,
যা’তে ফেরে এমনতর
সম্ভব কঠোর শাসনে ধাস্। ২৩।
যে-অভ্যাস যে-ব্যবহার
চিন্তা-কথা-কায়দা তোদের,
ঐ সকলের সেচন পেয়ে
প্রকৃতি গজায় সন্তানের। ২৪।
ছেলেপুলে দিতে এলেই
বাহবা দিয়ে সেইটি নিবি,
সৎদানের প্রবৃত্তিটিরে
ঐ তালেতে গজিয়ে দিবি। ২৫।
মায়ের উচিত পিতার প্রতি
ছেলেপিলের শ্রদ্ধানতি
বাড়ে যা’তে তেমনি করা–
উছল এতেই সন্ততি। ২৬।
মাতৃটানে বৃত্তি কাবু
ছেলেপুলের যেইখানে
সার্থক বৃত্তি সমাহারে
স্বতঃ-উন্নতি সেইখানে। ২৭।
নিজ অভ্যাস-ব্যবহারে
ঘৃণ্য রেখে যদি
সন্তানেরে হ’তে ভাল
বলিস নিরবধি,
উল্টো হবে, পারবি না তা’
ক্ষোভে ভরবে মন,
অভ্যাসে আর ব্যবহারে
থাকিস্ সচেতন। ২৮।
সেবাবুদ্ধি স্বতঃই জাগে
এমনি ধাঁজেই মানুষ করিস,
বড়র মানটি রাখে যা’তে
কথায়-কাজে সেইটি ধরিস্। ২৯।
ভাল করার রোখটি যা’তে
গজিয়ে উঠে অটুট হয়,
ওতে বিশেষ লক্ষ্য রাখিস্
ও বিনে সব হবেই ক্ষয়। ৩০।
পিতৃমাতৃকুল-গরিমা
ছেলের কাছে ধরবি এমন,
ফুল্ল হ’য়ে শিউরে উঠে
বাস্তবে হয় দক্ষ চেতন। ৩১।
ইষ্টকথায় সদাচারে
ঝালিয়ে দিবি মনের রং,
স্বভাব হবে তেমনি ছেলের
চলন-বলন তেমনি ঢং। ৩২।
পিটুনি দিয়ে শাসন করে
শেখাতে যাস্’নে ছেলেয় কিছু,
কুবুদ্ধিটি তল্ছা মেরে
ছুটবে সর্ব্বনাশের পিছু। ৩৩।
সমঝ-শাসন করার পরে
নরম মতি দেখতে পেলে,
আদরভরা সহানুভূতি
দিয়ে সৎ-এ ধরিস্ ছেলে। ৩৪।
ছেলের বাঁচাবাড়ার দিকে
নেহাৎ যদি মনই যায়,
নিজ অভ্যাস-ব্যাভার-ঝোঁকে
রাখিস্ কাজে সৎ-ধাওয়ায়। ৩৫।
খারাপ কিছু করতে গেলেই
বুঝিয়ে বলিস্, করতে নেই,
না করবে যেই দিস্ বাহবা
উন্নয়নের এইটি খেই। ৩৬।
না দেখলে মা’য় আঁধার দেখে
দুষ্টুমি হয় হতভম্ব,
এইটি বড়ই সুলক্ষণের
বর্দ্ধনেরই দৃঢ় স্তম্ভ। ৩৭।
পিতার উচিত মাতৃভক্তি
অটুট থাকে সন্তানের–
ব্যাভার-আচার-কথায় তেমনি
পুষ্ট করাই মঙ্গলের। ৩৮।
ছেলেপুলোয় ভয় দেখাস্’নে
সাহস সাথে এষণায়
বাড়িয়ে দিবি এমনিভাবে–
বাহবাভরা ভঙ্গিমায়। ৩৯।
পাঁচ বছরেই ছেলেপুলের
অভ্যাস-ব্যাভার ঝোঁক্–
যেমনি আনিব এস্তামালে
তেমনি জীবনের রোখ। ৪০।
যেমন স্বভাব-আচার-বিচার
পড়শী-পরিবারে,
সন্তানেরও স্বভাব বাঁধা
জানিস্ তেমনি তারে। ৪১।
স্বামী-স্ত্রীতে ঝগড়া করে
ছেলেপুলেয় দেখে,
গোল্লায়েরই সদর দ্বারে
বাছাগুলোয় রাখে। ৪২।
শিক্ষা
শিক্ষা
মাটি ফুঁড়ে জন্ম যা’দের
মা’র পোষণে যেমনি গজায়,
চলতি পথে লক্ষ্য যেমন
প্রকৃতি তা’য় তেমনি সাজায়। ১।
যেমনভাবে যে-সময়ে
সক্রিয় হয় যে-সংস্কার,
অমনি শিশু সেই তালে রয়
চলন-বলন করতে তা’র;
ঐটি দেখে ধরবি তখন
ওরে শিক্ষক বুদ্ধিমান,
আলাপ-কথায় খেলার তালে,
অভ্যাসে কর্ দক্ষপ্রাণ;
ভালমন্দ সে-সংস্কারে
কেমন বা কী করতে হয়,
এমন তালিম করে দিবি
স্বভাবে গাঁথা রয়ই রয়। ২।
সহজাত সংস্কারে ঝোঁক
জুড়ে দিবি এমনি যত,
জানার পাল্লা বাড়বে তেমনি
অভ্যাসে দক্ষ হবে তত;
সহজাত সংস্কারেরই
তোষণ-পোষণ আর স্ফুরণে,
তুচ্ছ ক’রে শিখাতে গেলে
শিক্ষা যাবেই ঠিক মরণে,
তাইতে আগে সহজাত
সংস্কারে তুই পুষ্ট কর্,
তারপরেতে তেমনি জুড়িস্
বাড়িয়ে তুলতে আরোতর। ৩।
করার পথে চলতে গেলে
এতই ঠকা শেখাই দায়,
অতো ঠকে শিখতে গেলে
জীবনে কি পাড়ি পায়?
শিখেছে যে তা’র কাছে তাই
শেখায় শরণ নেওয়াই ভাল,
নইলে যে তোর বোকা সাহস
ভরজীবনই ঠকিয়ে গেল। ৪।
আচার্য্যে নাই অনুরতি
শিখতে যাচ্ছে কী?
শ্রদ্ধা, প্রশ্ন, সঙ্গ, সেবায়
শিক্ষা ছাড়া সব মেকী। ৫।
ইষ্টপ্রাণ জনসেবা
কৰ্ম্ম সেই মননে,
এই তো শিক্ষার মূল
রাখিও স্মরণে। ৬।
ব্রহ্মচর্য্যে সদ্গুরু-সঙ্গ
ভিক্ষা, তপস্যা, সেবা অঙ্গ। ৭।
শিক্ষা যেথায় শ্রমের সাথে
আদত শিক্ষা জানিস্ তা’তে। ৮।
অভ্যাস, ব্যবহার ভাল যত
শিক্ষাও তা’র জানিস্ তত। ৯।
মুখে জানে ব্যবহারে নাই
সেই শিক্ষার মুখে ছাই। ১০।
শেখাবার মত দায়িত্ব-ভরা
ভরদুনিয়ায় কী কাজ আছে,
শিক্ষক-স্বভাব বিচ্ছুরণে
উচে ওঠে ছাত্র মাঝে। ১১।
সবই জানিস্ শিক্ষারই দান
শিক্ষাতেই সব গজিয়ে ওঠে,
শিক্ষাতে তাই আনবে, যা’তে
উন্নততর ঝোঁকটি ফোটে;
উন্নতিপ্রাণ জ্ঞান-গবেষণ
কর্মনিষ্ঠ তৎপরতা,
শিল্পমুখর শিক্ষা আনে
দক্ষনিপুণ ক্ষিপ্রতা। ১২।
বৈশিষ্ট্য সমৃদ্ধ যা’তে
উন্নত-ঝোঁকে পরিপুষ্ট,
তা’কেই বলে আদত শিক্ষা
তা’ বিনে ও হবেই দুষ্ট। ১৩।
বৈশিষ্ট্যে তোর নাকাল ক’রে
হ’লি কতই বিদ্যাবান্,
শিখতে গিয়ে সাজলি খোজা
জনম ছাপটি করলি ম্লান। ১৪।
ঈর্য্যা, আক্রোশ, হীনত্বে তোর
করলি শিক্ষার উদ্বোধন,
প্রকৃতি তোর নীচুই রইল
বৃহৎ ইতর জীবন-মন। ১৫।
শিখলি যে তুই কত-শত
বোধ তো কিছুই ফুটল না !
স্মৃতির বলদ হ’লি শুধু
একমুঠো ভাত জুটুল না?। ১৬।
দায়িত্বভরা যা’কিছু তা’র
সবার সেরা শিক্ষকতা,
ইষ্টনিষ্ঠ স্বভাব ছাড়া
অধ্যাপনা বর্ব্বরতা। ১৭।
ঝোঁক না বুঝে শিক্ষা দিলে
পদে-পদে কুফল মিলে। ১৮।
শিক্ষকের নাই ইষ্টে টান
কে জাগাবে ছাত্রপ্রাণ। ১৯।
থাকলে ছাত্রে ইষ্টে টান
তবেই জাগে করার প্রাণ। ২০।
লেখাপড়ায় দড় হ’লেই
শিক্ষা তা’রে কয় না,
অভ্যাস, ব্যাভার সহজ জ্ঞান
না হ’লে শিক্ষা হয় না। ২১।
ব্যবহার আর অভ্যাসের
সঙ্গতি যা’র যেমনই,
লেখাপড়া যাই না জানুক
শিক্ষা কিন্তু তেমনই। ২২।
শেখায় কওয়ায়, করায় না
গুরুত্ব তা’র দাঁড়ায় না। ২৩।
শিখতেই যদি চাস্–
শ্রদ্ধাভরে পরিচর্যায়
শোনায়-করায় ধাস্। ২৪।
বোঝাবার এক সোজা পথ
কী আছে তা’ জানিস্?
সমঝা পথের ভিতর-দিয়ে
বুঝের পথে আনিস্। ২৫।
শেখাই যদি সাধ–
হাতে-কলমে না শিখলে তোর
সবই যে বরবাদ। ২৬।
জানতেই যদি চাস্
আলস্যহীন অনুরাগে
জ্ঞানীর পানে ধাস্। ২৭।
বুঝতে রাখবি শিশুর মত
সন্ধানী তোর শ্রদ্ধানতি,
মুগ্ধ নেশায় বুঝবি তাহা
করায় নিবি দক্ষগতি। ২৮।
স্বতঃস্বেচ্ছ অভিধ্যানে
ছুটলে আবেগ কাজের পথে,
শিক্ষা তখন সহজ পায়ে
গজিয়ে ওঠে মনোরথে। ২৯।
আলোচনায় দেখে-শুনে
কিংবা করায় আসে বুঝ,
তর্ক-নিকষে প্রশ্ন ক’ষে
বাড়েই বড়াই আর অবুঝ। ৩০।
লেখাপড়া শিক্ষা দিতে
এমনি ধাঁজে শেখাস্ তা’য়,
শেখার লোভের অটুট টানে
শিক্ষা-চাপে টের না পায়। ৩১।
অভ্যাস-ব্যাভারে সৎ-এতে ঝোঁক
প্রবৃত্তি পারে না ফিরাতে রোখ,
সেবাপটু শিক্ষকে টান
সেই ছাত্র হয় মতিমান। ৩২।
পরিবারটি সহজ শেখায়
গেঁথেই তুলতে চাস্ যদি,
গবেষণাগার শিল্প-কুটীর
পাল্ কৃষি-ভুঁই নিরবধি। ৩৩।
বংশক্রমিক যে-জীবিকা
তা’রই পূরণ-টানে,
শিক্ষায় জ্ঞানের ব্যাপকতা
বৃহৎ বৃদ্ধি আনে। ৩৪।
উপাধি দেখেই শিক্ষার হিসাব
করতে গেলেই ঠক্’বি,
অভ্যাস-ব্যাভার-ঝোঁকেই বিদ্যা
নইলে বেবুঝ থাকবি। ৩৫।
আপ্রাণ ইষ্টনিষ্ঠ যিনি
সাশ্রয়ী আচারে অর্জিত জানা,
সমাহারী পর্য্যায়ী জ্ঞান
ভাবায়-করায় দীপ্তটানা,
সেবা-সম্পদ সহানুভূতি
আপন-করা বুকের টান,
শিক্ষক ব’লে তা’কেই জানিস্
তিনিই বাস্তব বিদ্যাবান্। ৩৬।
শিক্ষকেতে শ্রদ্ধাশীল
সেবাপটু ঝোঁক,
দোষ দেখার কু-অভ্যাসে
নাইকো যা’র রোখ;
সুচিন্তায় করণীয় যা’
উদয় হ’লেই জ্ঞানে,
বুঝে-সুঝে জোগাড় ক’রে
মূর্ত্ত করেই আনে;
সন্ধিৎসাটি বুঝ-পরায়ণ
দক্ষ কৰ্ম্ম-বুদ্ধি,
সেই ছাত্রই পায় অচিরে
সর্ব্ব কর্ম্মে শুদ্ধি। ৩৭।
শিক্ষাতে আন্ শ্রদ্ধা-সেবা
ব্যবহারে বৃদ্ধি-সুর,
অভ্যাসে হ’ দক্ষনিপুণ
দৈন্য-পিশাচ কর রে দূর। ৩৮।
শ্রদ্ধাচর্য্যা প্রশ্ন-সেবায়
অনুনয়ী আলোচনা,
এই হ’চ্ছে বোঝার রীতি
এতেই কৰ্ম্ম-উদ্দীপনা। ৩৯।
মাতৃভক্তি অটুট যত
সেই ছেলেই হয় কৃতী তত। ৪০।
স্বাস্থ্য ও সদাচার
স্বাস্থ্য ও সদাচার
সদাচারে বাঁচে-বাড়ে
লক্ষ্মী বাঁধা তা’র ঘরে। ১।
সদাচারে রত নয়
পদে-পদে তা’র ভয়। ২।
সদাচার বলে কা’রে
তা’ কিরে তুই বুঝিস্?
যে-আচারে বাঁচে-বাড়ে
সদাচার তা’ জানিস্। ৩।
সদাচারে লক্ষ্য রেখে
যে-কাজ করিস্ চলিস্ দেখে,
অনাচারে বাড়বে ভয়
আনবে কতই বিপর্যয়। ৪।
স্বাস্থ্যটিকে নিয়ন্ত্রণে করি’ দৃঢ়তর
থেকো তুমি সুজাগ্রত ওহে অনুক্ষণ–
পূজিবারে ইষ্টদেবে সার্থক আচারে
নীচ বুদ্ধি, অহমিকা করিয়া বর্জন। ৫।
আচার বিনয় বিদ্যা কাজে
দেখবি যেমন দক্ষ যা’য়,
তেমনি কুলের গরব নিয়ে
জন্মেছে সে এ ধরায়। ৬।
ইষ্টনেশায় তুষ্ট প্রাণ
সদাচারী হ’লে,
মনের স্বাস্থ্য জীবনশক্তি
অটুটভাবেই চলে। ৭।
ইষ্টনিষ্ঠ সদাচারী
নীচ জাতিও হ’লে,
অন্নপানীয়ে কমই দোষ
জাত যায় না ছুঁলে। ৮।
স্বতঃই তুষ্ট বিপত্তিতেও
নয়কো মনের ধাঁজ এমন,
সদাচারী স্বভাব-ঝোঁকা
রয় না যাহার অনুক্ষণ;
পরিবার আর পাড়াপড়শীর
সেবা প্রীতি-অনুরাগে,
উচ্ছলতায় উন্নয়নে
ধায় না প্রীণন-প্লাবন-যাগে;
আহার-বিহার চেষ্টা কাজে
সাম্যস্বভাব নয় যে-জন,
আগন্তুকী ব্যাধির পূজায়
কাটায় জানিস্ ভরজীবন। ৯।
সদাচারী নয়কো যে-জন
ইষ্ট-বিহীন রয়,
পান ও ভোজন তাহার হাতে
বিষ-বহনী হয়। ১০।
ব্রাত্য-অন্ন দুষ্ট হবেই,
দ্বিজ-অন্ন নয়,
শ্রদ্ধা-বিনয়ী সদাচারী
যদ্যপি সে হয়। ১১।
ঘুমিও তুমি ততটুকই
অবসাদ না আসে,
চেতন থাকাই বর বিধাতার
জড়ত্ব যা’য় নাশে। ১২।
কাজের ঝোঁকে চল্’বি
যতই শরীর ভুলে থেকে,
শরীর হবে সহনপটু
স্বাস্থ্য আসবে হেঁকে। ১৩।
গম্যাগমন পুষ্ট করে
সর্ব্বদেহের স্নায়ুজাল,
অভাব বা তা’র অত্যাচারে
আয়ু স্নায়ু পয়মাল। ১৪।
মাদক-মাতাল হওয়া জানিস্
বড়ই নিঠুর পাপ,
বাতুল বিষাদ-উত্তেজনায়
আনেই অপলাপ। ১৫।
রোগ হ’লে তুই থাকিস্ স’রে
কিছুতেই তা’ ছড়াবি না,
ছোঁয়াছুঁয়িতে নাকাল হ’বি
সাবধান ওটা চারাবি না। ১৬।
নাকে-মুখে আঙ্গুল দিয়ে
অমনি তাহা ধুতেই হয়,
নইলে কুটিল রোগের হাতে
নষ্ট মানুষ হয়ই হয়। ১৭।
দাঁড়িয়ে হাগা, প্রস্রাব করা
দুই-ই মস্ত কু-অভ্যাস,
স্নায়ুশিথিল ক্লৈব্য আসে
থাকেই হ’য়ে ব্যাধির দাস। ১৮।
মুখে দিয়ে কোন-কিছু
উগরে সেটি খাস্’নে ফিরে
ওতেও কিন্তু স্পর্শি’ লালায়
অনেক ব্যাধি ধরেই ঘিরে। ১৯।
বাহ্যি-প্রস্রাব-শৌচ সেধে
পা-হাত-মুখ ধুয়েই ফেলিস্,
উড়ুকু মল প্রস্রাব-কণা
বয়ই ব্যাধির অশেষ বিষ। ২০।
পরের গামছা কাপড় পরা
বিছানা-বালিশে শোওয়া,
ব্যাধির বিপাক দুৰ্দ্দশাকে
কুড়িয়ে দেহে নেওয়া। ২১।
বাহ্যি ক’রে ময়লা ঘেঁটে
হাতটি ধুয়ে ফেলে,
ভাল ক’রে মাটি-জলে
শুদ্ধি নাহি পেলে,
চর্মরেখায় মলের কণা
লুকিয়ে ধ’রে লক্ষ ফণা,
চোখ আড়ালে ছোবল দিয়ে
মারেই বিষটি ঢেলে। ২২।
বিছানার চাদর বালিশের ওয়াড়
নিত্য-ব্যবহারী কাপড়-জামা,
জলে ধুয়ে রৌদ্র-তপ্ত
না করলে ঘটে ঢের হাঙ্গামা। ২৩।
সূঁচ-কাঠি আর ছুরি কিংবা
আর যা’-কিছু হোকই না,
ভাল করে না শুধরে তা’য়
দিবি না মুখে, খুঁটবি না;
এটি করা বেজায় দোষের
হঠাৎ বিপদ আসে প্রাণের,
শক্ত রোগের বাগে প’ড়ে
দিগ্’বিদিক্ তুই দেখবি না। ২৪।
হরদম রোগ লেগেই থাকে–
দ্যাখ্ আগে তুই ছেলের মাকে,
নিশ্চয় বেকুব অজান বেটী
আচার-বুদ্ধি নেইকো খাঁটি,
পরিপাটি নয় কৰ্ম্ম তাহার
ধারে না বিধি-নিষেধের ধার,
ভাল-মন্দ জানে না কিসে
বেটী এমনি হারাদিশে,
তাইতো অমন রোগ-বালাই
শোধরান ছাড়া ওষুধ নাই। ২৫।
পাক-পোষণী রক্তচাপ
অধিকভোজীর বেড়েই যায়,
মস্তিষ্ক না পোষণ পেয়ে
ক্রমেই চলে ক্ষীণতায়। ২৬।
ছেলে হ’তে নিঃস্রাব যত
হ’য়ে হয় তা’ পচনশীল,
প্রাণধ্বংসী বীজাণুতে
বিষিয়ে দেয় প্রতি তিল। ২৭।
শুদ্ধ হাওয়া মৃদুল আলো
চলতে পারে এমনি করে,
আঁতুড় ঘরটি একটু দূরে
রাখবি কিন্তু তৈরী করে। ২৮।
চোখের জল বা পিচুটি মুছে
চোখ-হাত ধুয়ে ফেলাই ভাল,
নইলে কিন্তু হ’বি সবই
হরেক ব্যাধির কুজঞ্জাল। ২৯।
একই পাত্রে অনেক জনে
ছোঁয়াছুঁয়ি করে খাওয়া,
এটা কিন্তু রোগবাহী
অভ্যাসেরই লাই দেওয়া। ৩০।
একই জলে বারবার হরেক
জিনিস ধোওয়া,
মরণ-কণা বহন করে
পরিচ্ছন্ন রওয়া। ৩১।
বাজার থেকে এনে জিনিস
না ধুয়ে, ফুটিয়ে, রৌদ্রে দিয়ে,
খাওয়ায় কিংবা ব্যবহারে
আসেই ব্যাঘাত ও-পথ বেয়ে। ৩২।
শিক্’নি ঝেড়ে ধোয় না হাত
বক্ষব্যাধির হয় উৎপাত। ৩৩।
মলত্যাগ আর প্রস্রাব ক’রে
উপযুক্ত শৌচে যাবি,
নইলে জানিস্ খল ব্যাধিতে
হঠাৎ কিন্তু নষ্ট পাবি। ৩৪।
দাঁত, মুখ, জিত্ রাখবি সুস্থ
উদরটাকেও তেমনিই
রইবে সুস্থ দেহ-জীবন
এ নীতিটা এমনই। ৩৫।
জলাশয়ে প্রস্রাব ক’রে
কলসী করে সে-জল আনে,
তাই খাইয়ে মৃদুল বিষে
পরিজনের জীবন হানে। ৩৬।
বাঁচাবাড়ার ধার ধারে না
অভ্যাস-আচার মলিন,
অসৎ-বংশ-উচ্ছ্রিত সে
বোঝে না সমীচীন। ৩৭।
ঘৃণা যতই উথলে ওঠে
অপ্রবৃত্তি ফোটে,
মনে আসে চঞ্চলতা
অস্বস্তিও জোটে;
এমনতর স্থান-পাত্র
কিংবা কিছু হ’তে
এড়িয়ে চলিস্, ধরিস্ না তা’–
হীনস্বাস্থ্য ওতে। ৩৮।
মনটা দুষ্ট হ’লেই জানিস্
রোগের আথাল হয়,
ঐটাকে তুই এড়িয়ে চলিস্
করবি ব্যাধি জয়। ৩৯।
মন যেমন তোর থাকলে শুদ্ধ
সুস্থ সবল হ’বি,
পড়শী তেমনি না হ’লেও কি
স্বাস্থ্যে অটুট র’বি?। ৪০।
আঁতুড়ে যেয়ে ছুঁয়ে-নেড়ে
বাইরে এসে শুদ্ধ গায়ে
অন্য কিছু ছোঁয়া-নাড়া
করবি, নইলে পড়বি দায়ে। ৪১।
আঁতুড়ে গিয়ে ছুঁয়ে-নেড়ে
পরিশুদ্ধ না হ’য়ে কেউ
ছুঁয়ে-নেড়ে একশা করলে
সইতে হবেই রোগের ঢেউ। ৪২।
ঋতুমতী নারী হ’লেই
তিন কিংবা চারটি দিন,
খাওয়া-শোওয়ার জিনিসপত্র
ছোঁয়া নয়কো সমীচীন;
অন্তঃরুদ্ধ সঞ্চিত বিষ
শোণিত-স্রাবে ধৌত হয়,
ছোঁয়া-নাড়া স্পর্শদোষে
উহাই কিন্তু সঞ্চরয়;
সুস্থ দেহে ঐ বিষেতে
দুষ্ট রোগের হয় আবাস,
পরিবারটি ঘিরে ধরে
ফলে-মূলে হয় নিকাশ। ৪৩।
ঋতুগায়ে নারী যা’রা
ছোঁওয়া-নাড়া করে,
নিজেও নষ্ট হয় তাহারা
মারেও অপরে। ৪৪।
সদাচারে রয় না নারী
বয় না আচারে সন্ততি,
অশ্রদ্ধাতে স্বামী ভজে
অতৃপ্ত রয় দম্পতি
আহার-বিহার পয়সা-কড়ি
এতেই বাতুল রতি যা’র,
প্রেষ্ঠস্বার্থে নয় পটু মন
বৃত্তিস্বার্থই বোধের সার,
পরিচ্ছন্ন ব্যবস্থিতি
কাজে-কর্ম্মে কভু নয়,
ঢালা-ফেলা খাওয়া-দাওয়া
বেহিসাবে করেই রয়,
এমন নারীর চতুদ্দিকেই
বালাইভরা রোগের জাল,
দৈন্যভরা ব্যাধি-পিশাচ
ধ’রেই চলে চণ্ডতাল। ৪৫।
ঋতুগায়ে তিনচার দিন
নারীর ছোঁয়া-নাড়ার দোষ,
এই স্বভাবে বয়ই নারী
জীবনভরা শোক-আপসোস। ৪৬।
অন্নে জানিস্ মন বয়
অন্ন-মাফিক প্রবৃত্তি হয়। ৪৭।
বাহ্যি-প্রস্রাব সেরে কিন্তু
শৌচ ক’রে যথারীতি
পা-হাত-মুখ অমনি ধুবি–
স্নায়ু পাবে স্থৈর্য্য-স্থিতি। ৪৮।
যে-সংসর্গে পালন-পোষণ
যেমন অন্ন খায়,
সেই সংস্কার পুষ্টি পেয়ে
জীবন-পথে ধায়। ৪৯।
না নেয়ে যায় রান্নাঘরে
এঁটো ধোওয়ার নাই রেওয়াজ,
যে যা’র খুশি পাক ছুঁয়ে দেয়
তা’ খেতে তুই হ’স্ নারাজ। ৫০।
লোক-সমাগম ছোঁয়া-নাড়া
হামেশা যেথায় হ’তে পারে,
তা’র তফাতে আঁতুড়-ঘরটি
রাখিস্ করে একটি ধারে। ৫১।
রাঁধা-বাড়া খাদ্য যত
সক্ড়ি বলে তা’য় নিয়ত,
ধরা-ছোঁয়ার সতর্কতায়
রাখতে-ঢাকতে হয়;
সক্ড়ি যা’ সব পচন-প্রবণ
রোগজীবাণু বয়,
ছোঁয়া-নাড়ায় সাবধান তা’য়
ধুলেই শুচি হয়। ৫২।
চুমুক দিয়ে খেয়ে কিছু
না ধুয়ে পাত্র খাস্’নে আবার,
জীবাণু অযুত লালার সাথে
করতে পারে ঢুকে সাবাড়। ৫৩।
যা’ ছুঁলে যা’ ধরলে রে তোর
শরীর-জীবন বিষাক্ত হয়,
সেই ধরা, সেই করাগুলিতেই
অস্পৃশ্যতার নীতি রয়। ৫৪।
সুষ্ঠু দেওয়ায় বাড়ে মায়া
সু-আহারে পুষ্ট কায়া। ৫৫।
অধিক ভোজন যা’রাই করে
দরিদ্রতায় প্রায়ই ধরে। ৫৬।
বিপ্রও যদি কদাচারী
শীল ও শ্রদ্ধা-হারা,
তা’রও দত্ত ভোজ্য অন্ন
বয় বিষেরই ধারা। ৫৭।
ইষ্টনিষ্ঠ নিখুঁত চলায়
শুদ্ধ সদাচারী,
বিনয়ভরা শ্রদ্ধাশীল যে
ভোজ্য অন্ন তা’রই। ৫৮।
ব্যাধিমুক্ত গুরু ছাড়া
কারু এঁটোই খেতে নাই,
এতে কিন্তু ধ’রেই থাকে
জীবনভরই রোগবালাই। ৫৯।
বাসী কিংবা পচা জিনিস
বাহন কিন্তু অশেষ রোগের,
ওর ব্যাভারে সাবধান র’বি
বাহক ও-সব দুর্ভোগের। ৬০।
সহজ আহার, শ্রম স্বাভাবিক
সহজ সুখে বসবাস,
উন্নয়নেই তৎপরতা
দক্ষকর্মী ন্যায়ের দাস;
যত সহজ এই যেখানে
স্বাস্থ্য সেথায় হাস্যমুখ,
অমনতর স্বাস্থ্য পেলেই
দেহের আয়ু প্রাণের সুখ। ৬১।
রবি গুরু পৌর্ণমাসী আর চতুৰ্দ্দশী
অমাবস্যা, সংক্রান্তি কিংবা একাদশী
এ-ক’টা দিন অন্ততঃ থাকিস্
পাতলা-পুতলি খেয়ে,
ব্যতিক্রমে পয়মালে যায়
ঘৃষ্ট আঘাত পেয়ে। ৬২।
আপদে রোগে বিধিমত
আমিষে দোষ হয় না তত। ৬৩।
খাস্’নে মাদক-পিঁয়াজ-রসুন
মাছ-মাংস নানাবিধ,
ওতে বিধান বিষাক্ত হয়
অযথা হয় উত্তেজিত,
যা’র ফলে বাঁচাবাড়া
সহজভাবে পায় না সাড়া,
মরণ-তরণ চলন যে-সব
হ’য়েই পড়ে বিক্ষোভিত। ৬৪।
সঙ্গীতে হয় শ্বাসের ব্যায়াম
দেহের ব্যায়াম নাচে,
এই ব্যায়ামই সহজ ব্যায়াম
নাই কিছু এর কাছে। ৬৫।
জ্ঞান-গবেষণ নিত্য করিস্
তপস্যাতে রত থেকে,
বিরোধ-বুদ্ধি হটিয়ে চলিস্
সদাচার আর শৌচ রেখে;
এই চলনে চ’লে রে তুই
ভেবে সংস্কার সাক্ষাৎ কর,
মস্তিষ্কটার তীক্ষ্ণ প্রভায়
হ’তে পারিস্ জাতিস্মর। ৬৬।
স্পর্শ-দোষে জীবাণু ধায়
সংস্রবেতে মন-
এই বুঝে তুই চলিস্-ফিরিস্
বুঝলি বিচক্ষণ? ৬৭।
ক্ষুধাই যদি জাগে–
তেমনি খাস্ যা’য় সতেজ থাকিস্
এড়িয়ে লোভের রাগে। ৬৮।
ঊষার রাগে উঠবি জেগে
শৌচে শীতল হ’বি,
সন্ধ্যা-আহ্নিক জপ-সাধনায়
ঈশের আশিস্ ল’বি;
কুতূহলে পড়শী ঘুরে
দেখবি সযতনে,
আছে কেমন কোথায় কী জন
মন দিবি রক্ষণে;
তারপরেতে বাড়ী এসে
শৌচে যথাযথ,
গৃহস্থালীর উন্নয়নী
অর্জনে হ’ রত;
স্নানটি সেরে আহ্নিক ক’রে
ক্ষুধামতন খাবি,
একটু চ’লে বিশ্রাম নিয়ে
আগুয়ানে ধাবি; এ
মনি তালে সচল চালে
চ’লে সন্ধ্যা এলে,
শৌচে শুদ্ধ হ’য়ে করিস্
আহ্নিক হৃদয় ঢেলে;
উন্নয়নের আমন্ত্রণী
গল্প-গুজব শীলে
হৃষ্টমনে আলোচনায়
কাটাস্ সবাই মিলে;
পড়শীদিগের অভাব-নালিশ
থাকেই যদি কিছু,
তা’র সমাধান যেমন পারিস্
করিস্ লেগে পিছু;
করণ-চলন ধরন-ধারণ
যজন-যাজন কিবা
সকল কাজেই ইষ্টস্বার্থে
চলিস্ রাত্রি-দিবা;
আদর-সোহাগ উদ্দীপনী
কথায়-কাজে ঝুঁকে,
স্বার্থ-কেন্দ্র সবার হ’বি
ধরবি ইষ্টমুখে;
বিশ্রামেরই সময় গা’টি
ঘুমল হ’য়ে এলে,
ইষ্ট-চলন মনন নিয়ে
ঘুমে গা’ দিস্ ঢেলে। ৬৯।
লোকচরিত্র
লোকচরিত্র
অভ্যাস-ব্যবহার
ঝোঁক আর রোখ,
দেখেই বুঝবে
কেমন লোক। ১।
যেমন প্রাণে যা’ দিবি তুই
পাওয়ার বেলাও তেমনি,
ভরদুনিয়ার মুখ্য স্বভাব
নিছক জানিস্ এমনি। ২।
কী হবে তোর কী পাবি
তুই কোথায় কাহার সকাশে,
মিলিয়ে দেখিস্ লেখা আছে
ঝোঁক-ব্যবহার-অভ্যাসে। ৩।
নিছক জানিস্ সজ্জনেরে
ফেলতে বেঘোরে,
স্বার্থ-লোলুপ ইতর যা’রা
ওৎটি পেতেই ঘোরে,
সৎ-চলনের সুযোগ নিয়ে
ফেলতে তা’দের বাগে,
ধাপ্পাবাজির ফিকির-প্যাঁচে
মিথ্যা কুটিল রাগে
অবাধভাবে ফন্দী হাসিল
হবেই মনে মানি’,
অত্যাচারের আবহাওয়াতে
রাখেই তাদের টানি’;
দক্ষ নজরে একটু দিয়েই
বুঝে-সুঝে নিয়ে,
সৎ-জনেরে রক্ষা করিস্
হৃদয়-শোণিত দিয়ে। ৪।
বুঝিস্-সুঝিস্ সবই বলিস্
মত্ত নিয়ে হামবড়াই,
ধরা-করার ধার ধারিস্ না,
নরকের তোর নাই রেহাই। ৫।
শোনা-কথার চশমা প’রে
যা’রেই কেন দেখিস্ না,
সহজ জ্ঞানটি সেলাম ঠুকে
চম্পট দেবে বুঝিস না?। ৬।
পুষ্টিদাতার পোষণে নাই
পরাণ-কাড়া চেষ্টা,
মৃত্যুই তা’র বন্ধু কেবল
নাজেহাল শেষটা। ৭।
সন্দেহ তোর যত
সঙ্কোচও তাই তত। ৮।
চরিত্র যা’র নিখুঁত চলায়
উন্নতিতে আগুয়ান,
দরিদ্র সে হোক না যতই
মানুষ নিছক লক্ষ্মীবান। ৯।
হুকুম করতে প্রয়াস যা’দের
তামিলে অপমান,
সহবাসে এদের জানিস্
নষ্ট কৰ্ম্মপ্রাণ। ১০।
নামে কাউকে করলে বড়
সত্তা বড় হয় না তা’র,
অভ্যাস-ব্যবহার-দক্ষতাতে
বাড়িয়ে তোলা মহিমার। ১১।
টাকার জন্য বান্ধবতা–
ঘটায় শত্রু সে মূঢ়তা। ১২।
শত্রু যে তোর তা’রেও যদি
কোন নিমকহারাম,
মিথ্যা নিন্দায় সমর্থন চায়,
তাও জানিস্ হারাম। ১৩।
মিত্রদ্রোহী কৃতঘ্ন যেই
বিশ্বাসঘাতক,
জানিস্ তা’র আছেই কিন্তু
অনন্ত নরক। ১৪।
যে-চরিত্র নিয়ে যাহার
যেমন অবস্থিতি,
বুঝে নিস্ তুই খাঁটি কথা
তাহাই প্রকৃতি;
প্রকৃতি তা’র যেমন চালায়
চলনও হয় তেমনি,
ভালই হউক মন্দই হউক
অবস্থা তা’র অমনি। ১৫।
কৰ্ম্ম ধরে যে যেমন
সংস্কারী ঝোঁক তা’র তেমন,
কৰ্ম্ম ক’রে ভাটায় বয়
পাওয়ায় ঝোঁক, কর্ম্মে নয়। ১৬।
সন্ধিৎসাটির অভাব যেথায়
বাড়ার বুদ্ধি খতম সেথায়। ১৭।
বাঁচাবাড়ার সন্দীপনা
যা’ হ’তে তুই পাচ্ছিস্ অত,
তা’র প্রতি নাই সমবেদনা
করছিস্ নারীর দরদ যত?
এর মানে কি জানিস্ রে তুই?
লুকিয়ে আছে মনের কোণে
কামদুষ্টির পুতিগন্ধ
ভ’রে আছে তোর গোপন-মনে। ১৮।
শোনা-কথায় মন টলে যা’র
ভেবেই যা’দের মন দ্যাখে,
প্রত্যক্ষেতেও অনাস্থা যা’র
কানেই যা’রা চোখ রাখে;
মিত্র রুষ্ট আপদ-দুষ্ট
পাওয়ায় পড়ে বাজ,
দুনিয়া তা’দের টিকারী দেয়
সাজায় হোলির রাজ। ১৯।
চাওয়ায় দড়, কাজে ঢিলে,
আপসোসী কথন,
এমন স্বভাব যে-মানুষের–
দুঃখ অনুক্ষণ। ২০।
টাকার কথায় বেপরোয়া
চালে বিরাট ধনী,
উপার্জনে ফক্কাবাজি
প্রতারণার খনি। ২১।
আলিস্যির বসবাস
আছে যা’র ঘরে,
দুঃখমাখা অবসাদ
রহে তা’র তরে। ২২।
‘না’-এর সাথে কুটুম্বিতা
রাখিস্ যদি তুই,
নিছক হ’বি লক্ষ্মীছাড়া
ধ্ব’সে যাবে ভুঁই। ২৩।
শ্রেষ্ঠপূজক নিবিড়নিষ্ঠ
গুণ্ডাদাপট ঢের ভাল,
এদের চলন সাহস-পায়ে
বীর্য্যতপায় দেশ আলো। ২৪।
সৎ-কথাতে দত্যিহানা
মন অবাধ্য হয়,
এমন যা’রা-নয়কো ভাল,
ক্ষয়েরই গায় জয়। ২৫।
উচ্চে অবজ্ঞা দেখবি যেথায়
হীনবংশ জানিস্ সেথায়। ২৬।
কথায়-কাজে দেখবি যেমন
মানুষকে তুই বুঝবি তেমন। ২৭।
অমুক হ’লেই দেখে নিতাম
ঈর্য্যা-ঠাট্টায় কয়,
জানিস্ তাহার গোপন মনে
ইতর অহং রয়। ২৮।
পূরণ-গড়ন কাজ-কথনে
যেমন যাহার মিল,
লোকটা মূলে তেমনি জানিস্
নাইকো ভুল একতিল। ২৯।
চলা-বলাই ব’লে দ্যায়
কেমন মানুষ কীই বা চায়। ৩০।
কৃতজ্ঞতায় তৃপ্ত থাকে
স্বল্পে সুখী হয়,
কী করবে তার অবসাদে?
নিত্য সে অভয়। ৩১।
কত অল্পে কত বেশী
করতে পারিস্ আয়,
এইটে দেখেই পারগতা
লোকের বোঝা যায়। ৩২।
সাশ্রয়ী সুন্দর দক্ষ কাজে
লোকটি নেহাৎ নয়কো বাজে। ৩৩।
স্বল্পে সুন্দর সচ্ছল জীবন
বাঁচাবাড়ায় সেই সুশোভন। ৩৪।
জীবন যা’তে উচ্ছলতায়
হৃষ্ট হ’য়ে ফোটে,
সার্থকতায় আত্মপ্রসাদ
সেথায় গিয়েই জোটে। ৩৫।
সুখ-উচ্ছ্বাস প্রেম-দীপনায়
সম্পদে কাছে রয়,
দুঃখ-বিষাদে দূরে স’রে যায়
সে-জন আপন নয়। ৩৬।
উপযুক্ত নয় যে যা’তে
দাবি-দাওয়া করেই তা’তে। ৩৭।
স্বার্থ-ব্যাঘাত সুখ-সম্পদ
দুঃখ-সঙ্কটে,
আগলে ধ’রে দাঁড়ায়
পাশে আপন সে বটে। ৩৮।
শক্তি দিও করতে পারি
তোমার সেবা-বর্দ্ধনা,
কৰ্ম্মহারা এ প্রার্থনায়
লুকিয়ে আছে ‘পারব না’। ৩৯।
অর্জনে পটু সাশ্রয়ী কাজে
সুন্দরে সমাপন,
এই দেখে তুই চিনবি লোকের
দক্ষতা কেমন। ৪০।
সব-কিছুতেই দেখতে যে পায়
গুরুর দয়ার কেরদানি,
ইষ্টস্বার্থে অটুট হ’য়ে
আপন স্বার্থ তাই জানি’,
চলনই যা’র এমনতর
যতই করুক শয়তানী,
সাধুর সেরা তা’কেই জানিস্
সেবামুখর তা’র প্রাণই। ৪১।
তোমায় সুখী করবোই আমি
কেন, তা’ কি পারব না?
দ্বন্দ্ব-আকুল এমনি কথার
অন্তরালে আছেই ‘না’। ৪২।
তামিল-বুদ্ধি দক্ষ-পটু
হুকুম-দাবীর প্রয়াস নাই,
পণ্ডিত ব’লে তা’রেই জানিস্
সিদ্ধিদাতা সেই জনাই। ৪৩।
সাশ্রয়ী চলনে শীঘ্র করে
সুন্দর নিপুণ কর্মী,
বিদ্যাবত্তার লক্ষণই ওই
আসল বিদ্বৎধর্মী। ৪৪।
কাজে-কথায় প্রেষ্ঠ-স্বার্থী
উদ্দেশ্যে অমোঘ গতি,
সাশ্রয়ী নিপুণ অর্জন-পটু
স্বার্থে শিথিল রতি;
এইগুলি সব দেবলক্ষণ
দেখবি চরিত্রে যা’র,
সেই তো জানিস্ স্বভাব মানুষ
বীরের হৃদয় তা’র। ৪৫।
ধরন-ধারণ যেমন যাহার
তরণ-তারণে সে তেমনই,
ব্যক্তিত্ব ফোটে আচার-ব্যাভারে
নিষ্ঠা-প্রত্যয় যেমনি। ৪৬।
বর্ণাশ্রম
বর্ণাশ্রম
মানুষ কেমন অন্তরে-
আঁকা আছে সুষ্ঠুভাবে
বীজের জীবন-কন্দরে। ১।
এক যখন নয় কাহারও রূপ
সবাই আলাহিদা,
চাওয়া-চলাও তেমনিতর
যা’র যেমন চাহিদা। ২।
কারু সমান নয়কো কেউ
প্রয়োজনও তেমনি,
যা’র মেকদার তা’রই মত
পূরণ-প্রবণ যেমনি। ৩।
সংস্কৃতিই তো জন্ম পায়
তেমনি বিধান নিয়ে,
সংস্কারও হয় প্রস্ফুটিত
তেমনি কৰ্ম্ম দিয়ে;
প্রয়োজনেরও সমস্যা যা’
পূরণ করে সংস্কার,
কৰ্ম্মে দীপন ফুল্ল হ’য়ে
যা’র যেমনই জন্ম তা’র। ৪।
প্রয়োজন যেথায় রকমারি
পূরণও যখন অমনি,
স্বভাবও ছুটবে অযুতভাবে
শ্রেণীও হবে তেমনি। ৫।
শিরখানা তোর সাবাড় হ’ল
ছিন্ন হ’ল কৃষ্টি-খেই,
ভাঙ্গ শিষ্ট জীবন-দানা
বর্ণহারা হ’লি যেই !। ৬।
দেহ-বিধানে সংস্কৃতির
জৈবী দানা যেমন,
বীজও বহে সেই প্রকৃতি
পোয়াও হয় তেমন। ৭।
এক বৈশিষ্ট্যের রকমারি
বহুর সমাবেশ,
তাই নিয়ে তো বর্ণ হয়
জানিও বিশেষ। ৮।
সমাজ-দেহে বর্ণ-বিধান
যন্ত্ররূপে চলে,
এমনতর বিশেষ চলায়
সমাজ বাড়ে বলে। ৯।
গুণ-বৈশিষ্ট্য অধিগমনে
বিশেষ শ্রমের উৎকর্ষে,
ধাপে-ধাপে অধিবিদ্য
হ’য়ে নিখুঁত প্রজ্ঞা অর্শে;
চতুরাশ্রমের এই তো তুক
হাতে-মাথে বিদ্যাবান,
হ’য়ে ওঠে জন-সমাজ
তৃপ্তিতে গায় সামের গান। ১০।
বর্ণাশ্রমী নয়কো যা’রা
আর্য্যকৃষ্টি মেনে চলে,
কিংবা আৰ্য্যীকৃত হ’য়ে
বর্ণাশ্রম-প্রার্থী হ’লে,
গুণব্যঞ্জনা-সক্রিয়তায়
বংশক্রমে ব্যক্তিগত,
অনুক্রমে যথাবর্ণে
করবি তা’রে সুসংহত। ১১।
বৈশিষ্ট্যবান সবাই কিন্তু
নিজ-বৈশিষ্ট্যে সবাই বড়,
পরিপূরক যা’রাই যতর
তা’রাই কিন্তু মান্যে দড়। ১২।
সংস্কৃতির পরিচর্যায়
নিয়ত চ’লে-চ’লে
প্রকৃতিতে দেহ-বিধানে
যে-সংস্থিতি ফলে,
সংস্কারে সেইটি থেকে
বংশ অনুক্রমে,
নানান্ ধাঁজে সেই গুণেরই
কৰ্ম্ম ফোটে শ্রমে;
বহু ধাঁচে সেই গুণেরই
রঙ্গিল সম্মিলন,
বর্ণের তুক এইটি জানিস্
মনীষীর কথন। ১৩।
গুণ-বৈশিষ্ট্যে দাঁড়িয়ে শ্রমে
উৎকর্ষেতে চলা,
বর্ণাশ্রমের এইতো নীতি
ঋষির মুখে বলা। ১৪।
বস্তুতঃ-যা’ গোপন করে
আসল ব’লে ভেজাল চালায়,
সত্যটাকে লুপ্ত করে
মিথ্যা ভ’জে সকল খোয়ায়। ১৫।
দেহযন্ত্রের সুহৃৎ-চলন
পরস্পরের সহযোগে,
জীবন যেমন জ্যান্ত চলায়
উপচে তোলে উপভোগে,
সমাজদেহেও বর্ণ-বিধান
সুহৃৎ-চলায় পরস্পরে,
এক আদর্শ-সার্থকতায়
জনবৈশিষ্ট্যে পূরণ করে। ১৬।
যথাযথ পরিশ্রমে
জ্ঞানের যেথায় আহরণ,
সুধীজন করেন তা’রেই
আশ্রম ব’লে সম্বোধন। ১৭।
কৃষ্টি-পথে অর্জি’ অশেষ
জনন যবে সংস্কৃতি পায়,
ব্যক্তিত্বের ঐ উৎসৃজনে
পুষ্টিপোষণে বিশেষ ধায়;
ভরদেশেতে বিশেষ মানুষ
হাজার-করা একটি হ’লে,
কৃষ্টি-বোধে উন্নয়নে
অঢেল তালে দেশটি চলে;
বিশেষ পালে বিশেষভাবে
সকল দেশের জনপদে,
তাইতে বিশেষ স্বার্থ তা’দের
বাড়ায় বিশেষ সুসম্পদে;
বিশেষ গড়ন কৃষ্টি-ধরণ
কৃষ্টিপথেই বিশেষ হয়,
বিশেষ নিয়েই বিশেষ ভাগে
বর্ণ-থাকের হয় উদয়;
বিশেষহারা জাতটি জানিস্
বৃত্তি-চলায় সব খোয়ায়,
বিশেষেরে শ্রদ্ধা-দানে
ছোট্ট যা’রা বিশেষ পায়;
বিশেষ পানে নাইকো টান
দেখিস্ কোথায় অভ্যুত্থান?
বিশেষ জনে রক্ষা করা
জানিস্ জাতির ধর্ম-মান;
প্রতিলোমে এই বিশেষই
সর্ব্বনাশে নিকেশ পায়,
প্রতিলোমে রাষ্ট্রেও তাই
জন্মে ইতর, নষ্ট তা’য়;
ওরে বেকুব অজান জাতটি,
তাইতো বলি বিশেষ ধর,
প্রতিলোমে রুদ্ধ করে
বিশেষ জন্মে হ’ তৎপর ! ১৮।
বর্ণাশ্রমে রক্ষা করি’
ব্রাহ্মী সমীক্ষা ধরি’,
ইষ্টানুগ তৎপর চলন-
ঋষিবাক্যে আস্থাবান,
লোকহিতে আগুয়ান
হ’য়ে তুমি হও রে ব্রাহ্মণ !
এই আর্য্য-অনুশাসন
রেখো মনে অনুক্ষণ-
বর্ণ-নির্বিশেষে হয়
এই আচরণ। ১৯।
প্রত্যয় কর্ বজ্র-কঠোর
যাজন-সেবায় নাচিয়ে তোল্,
বিদ্রোহে দল্ বিরোধ যতেক
উদ্দামে জাগা কৃষ্টি-রোল;
কৃষ্টি-চলনে সাম্যেতে চল্
পরস্পরের স্বার্থ হ’য়ে,
সাম্য-পায়ে বর্ণ, কৃষ্টি ব
র্দ্ধনে তোল্ ক্রমান্বয়ে;
পুরুষোত্তমে হ’য়ে সমাহার
এমনি চলনে আর্য্যছেলে,
রক্তে ফুটাও তরুণ অরুণ
স্বস্তি-নৃত্যে জীবন ঢেলে। ২০।
জীবন-চলন প্রয়োজনে
জনবৈশিষ্ট্য রক্ষা করা,
এইটি জানিস্ আর্য্যনীতি
এর ব্যাঘাতই জীবনহরা। ২১।
ইষ্টানুগ দক্ষ ক’রে
ব্যষ্টিপূরণ-স্বার্থ রাখা,
বিপ্র জানে ঐ পথেতেই
আত্মস্বার্থ দীপ্ত আঁকা । ২২।
বাঁচতে নরের যা’-যা’ লাগে
তাই নিয়েই তো বর্ণ জাগে;
স্বভাব-পটু শ্রমোৎপাদন
তাই দিয়ে সব করে প্রাণন;
বংশক্রমিক উৎকর্ষণ
গুণ ও কৰ্ম্ম নিয়ন্ত্রণ,
এই নিয়ে চার বর্ণ-বিভাগ
বিপ্র আদি চারটি থাক্-
এ না হ’লেই সর্ব্বনাশ,
ভাঙ্গে রাষ্ট্র, জাতি দাস । ২৩।
রকমভেদে জন-জাতিকে
সাজাবি এমন ক’রে-
উঁচুর ঝোঁকে অবাধ হবে
ধৰ্ম্ম রাখবে ধ’রে। ২৪।
বর্ণাশ্রমের সব ব্যাঘাত
জ্ঞান-খড়ো কর্ নিপাত। ২৫।
বজ্র আনি’ ধর্ খরশান
ম্লেচ্ছবুদ্ধি নিকেশ কর্,
চণ্ডপাপে দণ্ড হানি’
পণ্ডকারী চূর্ণ কর্। ২৬।
যে-বর্ণ হ’তে ব্রাহ্মণ হয়
বংশক্রমিকতায়,
বিপ্র হ’য়েও সেই গুণেরই
পূরণ-প্রভা পায়। ২৭।
পৌরোহিত্যে বিপ্র শ্রেষ্ঠ
ব্রহ্মবিৎও হয়,
বিপ্র-ব্রাহ্মণ সবার শ্রেষ্ঠ
তা’র কাছে কেউ নয়। ২৮।
দ্ব্যন্তর-বিপ্র পারশব
বিপ্রাচারী তা’রা সব,
বিপ্ররক্ষায় অস্ত্রধারী-
এ যথা নয়, পতন তা’রই। ২৯।
দ্ব্যন্তর-বিপ্র পারশবে
বিপ্র যদি না ধরে,
পারশব-সহ বিপ্র
ক্ষয়েই ওরে মরে। ৩০।
ইষ্টপ্রীতি প্রাণভরা যা’র
পূরণ-গড়ন ধাঁজ,
মানুষকেই যে স্বার্থ গণে
ভালবাসার রাজ;
তাঁ’রেই জানিস্ বিপ্র ব’লে
ব্রহ্মবিদের ঘর,
নরের কুশল প্রাণে গাঁথা-
ঈশের অনুচর। ৩১।
রক্ত অরুণ বজ্রবেগে
ক্ষত্র আবার ওঠরে জেগে;
আর্য্যকৃষ্টির যা’ ব্যাঘাত
বীর্য্যদাপে কর নিপাত!। ৩২।
ইষ্টানুগ ক্ষতত্রাণী
কুশল-তৎপর,
সেই মননে গবেষণায়
লিপ্ত নিরন্তর;
দুর্ব্বিপাকে দণ্ডধারী
লোক-পালক আর্য্যাচারী,
আর্ত্তপূরক ক্ষত্রিয় ধাত-
তাই তো রাজার জাত ! ৩৩।
বেদবজ্র মন্ত্র গভীর-
জাগ্ রে বৈশ্য তুলি’ তুঙ্গ শির,
পুণ্যদানপণ্যে জাতিদৈন্যহর
আর্য্যরাষ্ট্র অটুট কর্। ৩৪।
সমাজ-জীবন লওয়াজিমা
সংগ্রহেরই তরে,
ইষ্টতৎপরতায় যা’রা
জ্ঞান-গবেষণ ধরে;
প্রয়োজনের আপূরণে
বাঁচিয়ে রাখে মানুষ,
দানধর্মী তা’রাই বৈশ্য
তা’রাই শ্রেষ্ঠী পুরুষ। ৩৫।
সর্ব্বকাজে দিয়ে কাঁধ
রক্ষে দ্বিজ নাহি বাধ,
আর্য্যপন্থী আর্য্যচর
সেবাপ্রাণ সুতৎপর;
সুবর্দ্ধনে করে বহন
শুচীকৃত যা’রা-
ইষ্টানুগ তা’রাই শূদ্র
সমাজ-মেরু তা’রা। ৩৬।
সমীচীন সুশৃঙ্খলায়
নিষ্ঠাধারায় চল্লি না,
উদার বেকুব ঠাট্টা-ভয়ে
কৃষ্টিরই ধার ধারলি না? ৩৭।
বড়র যা’রা নিন্দা করে
ছোটই তা’রা অন্তরে,
নরকদেশে চলন তা’দের
কোন্ অজানা কন্দরে। ৩৮।
বৈশিষ্ট্যকে করলে হত-
দেশের-দশের জাতির ধূয়োয়,
জ্ঞানের আলোক যায়ই নিভে
জীবন পড়ে মরণ-কুয়োয়। ৩৯।
মূঢ়মত্ত মূর্খ যা’রা
আত্মহত্যা ডেকে আনে,
দেশে ওরাই না বাড়লে কি
আঘাতে বর্ণ-বিধানে? ৪০।
এক-আদর্শহীন সমাজ
পড়ে দরিয়ায় মাথায় বাজ,
টুকরো-টুকরো হ’য়ে মরে
সাধ্য কি কা’র রাখে ধ’রে! ৪১।
জাতে-বর্ণে আঘাত করে
বাতুল চালে সে-দেশ মরে। ৪২।
বিশেষ ধারার চাতুর্ব্বর্ণ্যে
ফুৎকারে বিষ উড়িয়ে দ্যায়,
বৃত্তিস্বার্থী-একসাইরা
লণ্ডভণ্ডে ক্ষয়েই যায়। ৪৩।
শূদ্রই তো জাতির চাকা,
বৈশ্য জোগায় দেশের টাকা,
ক্ষত্রিয়েরা রাজার জাত
সবার পূরণ বিপ্র ধাত। ৪৪।
বিপ্রই হ’স্ ক্ষত্রিয়ই হ’স্
হ’স্ না বৈশ্য অর্থবান্,
বর্ণ-সঙ্গতি যেই হারাবি
হবেই কৃষ্টি অন্তর্দ্ধান। ৪৫।
পিতা-মাতা পত্নী-পুত্র
পড়শী-স্বজন নিয়ে চলে,
ইষ্টকৃষ্টির উছল ধারায়
গার্হস্থ্যাশ্রম তা’রেই বলে। ৪৬।
ঘর-সংসার পাড়া-পড়শী
ছাপিয়ে উঠে বিস্তারে,
থাকবি যখন ইষ্টপথে
বানপ্রস্থ কয় তা’রে। ৪৭।
হলায়ুধের হল হেঁকে নে
ওরে আর্য্যকৃষ্টি-ঘোষী,
বিপ্র তোরা স্ফীত বক্ষে
ধ’রে দাঁড়া কোষা-কোষী;
বীর্য্যবক্ষী ক্ষত্র আবার
ধর্ রে দণ্ড, ধর্ রে অসি,
বৈশ্য দাঁড়া পাচন হাতে
গোধন-ধান্যে দৈন্য ধ্বসি’;
আর্য্য তোরা রুদ্র বেগে
আবার দাঁড়া দৃপ্ত রিঝে
রিক্তি মরণ মুক্তি-তপে
বীর্য্য-দাপে শূদ্র-দ্বিজে। ৪৮।
পুরুষ ও নারী
পুরুষ ও নারী
নারী পাবে পুরুষ-চলা
পুরুষ নারীর মতন,
পাগলা কথার ফোকলা মানে
দুয়েরই এতে মরণ;
নারীর ক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠা নারী
ধাত্রী পাত্রী মাতা সে,
পুরুষ কিন্তু পৌরুষে ধায়
গৌরব-গুরু উল্লাসে। ১।
নারীদেহের গড়ন-পেটন
কোষের উপাদান,
পুরুষ-পোষক ব’লেই কিন্তু
ভিন্ন তা’র আধান। ২।
ধাত্রী যা’রা পাত্রী যা’রা
হোত্রী-নেত্রী-প্রাণ,
আহৃতিদক্ষা পোষণ-দীপ্তা
লক্ষ্মী লোকত্রাণ;
শিষ্টা নারীর বিশেষ স্বভাব
ঐ তো নারীর স্থান। ৩।
পূরণ-প্রবণ পালন নিয়ে
বৃদ্ধির হ’য়ে রথী,
পুরুষ চলে কৃষ্টিরথে
নিয়ে গৌরব-গতি। ৪।
পূরণ-প্রবণ পরস্পরের
সাম্য-স্বার্থী অনুকূলে,
পূরণ-করা গড়ন-ভরা
কর্ম্মে সত্তা ওঠে ফুলে। ৫।
বউ-সর্ব্বস্ব হ’লি যেই
শয়তানেতে ধ’রল সেই। ৬।
বীরত্ব যা’র মেয়ে-মহলে
বাগ-বিলাসে ধায়,
বাস্তবতার আতপ-তাপে
শুকিয়ে ওঠে প্রায়। ৭।
মানদূরত্ব হটিয়ে দিয়ে
নারীর সঙ্গ করে,
এমন জনায় নিশ্চয় জানিস্
কাম-ডাইনী ধরে। ৮।
নারীমুখো রোখালো যা’রা
তা’রা কিন্তু কাপুরুষ,
বাহাদুরী সবই তা’দের
ভজে জেনো মেয়েমানুষ। ৯।
স্ত্রী-আনতি উদ্বোধনায়
তা’তেই মজে থাকল যে,
সেই প্রেরণা বাইরে ছুটে
অযুতে ফুটে ওঠে না সে,
সার্থকতায় শতেক ঘাটে
পূর্ণ করে না পড়শীপাটে,
যতেক পাখা উঠুক তাহার
মাছির রাজা জানিস্ সে। ১০।
পুরুষ যখন নারীর প্রতি
অবাধ অনুরাগে,
সমবেদনায় জর্জরিত র
ঙ্গীন প্রীতির ফাগে,
পুরুষ-প্রীতি সমবেদনা
ব্যথায় বীতরাগ-
সে-পুরুষের নষ্ট মাথা
কামেই সজাগ। ১১।
উচ্চে নারীর একনিষ্ঠ
ফুল্লরাগের দ্যোতনায়,
জীবন-জয়ে দীপ্ত পুরুষ
নিত্য নবীন মূর্ছনায়। ১২।
জাত-জনম-জীবন নারীর হাতে
শুচির নিয়ম তাই হয় মানাতে। ১৩।
নারীর পথে পুরুষ যখন
প্রগতিশীল নারীর টানে,
পুরুষত্বের বিলীনতায়
যাবেই উবে ধ্বংস-পানে;
নারী যখন পুরুষ-ছাঁচে
গ’ড়ে তোলে তা’র প্রকৃতি,
নারীত্বে তার পেত্নী-ভাবের
ঘ’টেই থাকে কুবিকৃতি। ১৪।
ভয়-সমীহ-সম্মান
আদরেও থাকে দূরত্বমান;
ভক্তি-আনত শ্রদ্ধামদির
অটুট টানেও সাম্য স্থির;
আবেগ-রাঙ্গা আসঙ্গেতে
মাখামাখি রয় না মেতে;
স্নেহ-মমতা এতেই জানা
পবিত্রতার ঐ নিশানা। ১৫।
কুমারী একটু বড় হ’লেই
পুরুষ ছুঁতে নেই,
যথাসম্ভব এর পালনই
উন্নয়নের খেই। ১৬।
বাপ-ভাই ছাড়া কারু কাছে
নিতে নাইকো কিছু,
নিলেই জেনো হয় মেয়েদের
মনটা অনেক নীচু। ১৭।
গান-বাজনা কি উৎসবে
কিংবা ভ্রমণেতে,
বাপ-ভাই ছাড়া পুরুষ সঙ্গে
দিস্’নে মেয়ে যেতে,
এই নীতিটি করলে পালন
কমই হবে মেয়ের স্খলন,
পুণ্য-ভরা সুফল পাবি
চলবি শুভে মেতে। ১৮।
শাসন-ভরা ভয়-সমীহে
মিতসোহাগ-আদরে
গজিয়ে উঠলে দক্ষ-সেবায়
সেই মেয়ে ঘর আলো করে। ১৯।
দেখে-শুনে কথা ক’য়ে
নতজানু নতির প্রাণে,
ভয়-সমীহ উঠলে ফুটে
তবেই নারী যোগ্যা মানে। ২০।
পতিব্রতী উপাসনায়
আলোক-লোকে সতী গজায়,
ও-তপস্যায় থাকলে জোর
পালায় দুঃখ-বিপাক ঘোর। ২১।
সতীর বাড়া পুণ্য নাই
বংশ-সমাজ আলো,
এই সতীত্বের উপাসনায়
অটুট আবেগ জ্বালো। ২২।
দুনিয়া হ’তে স্বর্গদ্বার
সতীর আলোয় পরিষ্কার,
বৃত্তিভেদী একমুখতা
আনেই সেবায় উচ্ছলতা;
দুঃখ-কষ্ট যাই-না আসুক
থাকলে সতী ঘরে,
শুভ হ’য়ে বন্দনা গায়
মলয় দোদুল ভরে। ২৩।
সতীর হাওয়া লাগলে গায়
পড়শী বেড়ে ঊর্দ্ধে ধায়। ২৪।
জীবন-বৃদ্ধি চর্যা করে
সাধলে স্বামীর উন্নতি,
পতিব্রতা কয়ই তা’রে
সিদ্ধ-কামা সেই সতী। ২৫।
সতী-পতিব্রতার চেয়ে
ধর্ষিতা যদিও ন্যূন,
প্রেষ্ঠমুখী তপের বলে
থাকে না কালে ঘুণ। ২৬।
স্বামীর প্রতি তুখোড় টানে
বৃত্তিভেদী নন্দনায়,
চলো যখন মেয়ে তুমি
পাতিব্রত্য রয় সেথায়;
ঐ সাধনায় সিদ্ধ হ’লেই
সতী হবে তুমি,
বংশ তোমার উজল হবে
উজল সমাজ-ভূমি। ২৭।
ছেলে-মেয়ে একযোগেতে
করলে পড়াশুনা,
পড়ার সাথে বাড়ে প্রায়ই
কামের উপাসনা;
কাম-কল্লোল নাই যদি পায়
সৎনিয়ন্ত্রণ শুভে,
ভ্রষ্ট হবে জন্মধৃতি
পড়বে পাগল-কূপে। ২৮।
শোন্ রে বলি আমার মেয়ে
আমার নিছক কথা,
চলিস্ শুনে সেই পথেতে
বুঝিস্ দিয়ে মাথা;
তুষ্টি প্রীতির পথে স্বামীর
জীবন, যশ আর বৃদ্ধি,
বৃত্তিভেদী অটুট টানে
হয় সতীত্বে সিদ্ধি। ২৯।
স্বামীর বর্ণ-বংশ-গৌরব
সবার চাইতে শ্রেষ্ঠ জানিস্,
সেই বর্ণ-বংশ-আচার
প্রাণপণেতে রাখিস্ মানিস্। ৩০।
পেটের ছেলেয় থাকেই নেশা
স্বামীর প্রীতির সুরে,
অন্যেতে যা’র ভালবাসা
রয় ছেলে তা’র দূরে। ৩১।
কত অল্পে কত বেশীর
পোষণ করতে পারিস্,
গৃহিণীপনার তুকটিই এই
নিছক মনে রাখিস্। ৩২।
ঘর-করনার কাজে-কর্ম্মে
সতত রাখিস্ কড়া নজর,
প্রয়োজন বুঝে কত অল্পে
করতে পারিস্ কত সুন্দর;
এই অভ্যাসের নিয়ন্ত্রণে
লক্ষ্মী বউটি হ’বি,
অল্পের ভিতর উপচে দিয়ে
সাশ্রয়েতে র’বি। ৩৩।
ঘর-করনার প্রত্যেক কাজে
দেখবি হিসাব ক’রে,
কেমন কোথায় কী রাখলে তা’র
নাশ ঘটে না ওরে;
কেমন করে কী হ’তে কী
বাঁচিয়ে রাখা যায়,
সুষ্ঠ-স্বল্প তুকের ভিতর
কী লাভ কোথায়;
এই নজরে এই হিসাবে
দেখবি রাখবি করবি,
টগবগিয়ে গৃহস্থালী
উচ্ছলতায় ধরবি। ৩৪।
কট্’মটিয়ে সুপুরি খাওয়া
নাক ডাকিয়ে পাড়া ঘুম,
ঘুমের মুখে চপ্’চাপানি
লালাপড়া বেমালুম;
দেখলে এমন পুরুষ-মনের
অনুগতি দৈন্য পায়,
এড়িয়ে চলার মেজাজ জাগে
সম্বেগও তার মিইয়ে যায়;
মুখে ঘামে চুলে গন্ধ
ময়লা কাপড় সায়া-
কুৎসিত এমন চলন-চালে
তিক্ত পুরুষ-মায়া। ৩৫।
পিতৃ-গৌরব শীলযুতে রাখ
শ্বশ্রূ-শ্বশুরে মহিমায়,
ভ্রাতৃদ্যুতি দীপন হৃদয়ে
দেবরে পালিও দ্যোতনায়;
মাতৃস্বভাব-সুরভি আহরি’
সৌরভে রাখিও প্রকৃতি,
ভগিনী-স্নেহল পালন-পরশে
ননদে দানিও সুকৃতি;
নিজসত্তার প্রতীক জানিয়া
স্বামীরে এমনই সেবিও,
দৈন্যে হানিয়া ঈশচেতনায়
তাঁহারে সজাগ, রাখিও;
পরিজন হ’তে আহরি’ আদর
সেবা-সম্মান-প্রতীতি,
তুষিও পুষিও নিয়ত সবারে
রেখো মেয়ে মোর এ-নীতি। ৩৬।
শ্বশুর-শাশুড়ী মমতা-প্রবণ
দীপন পুষ্টি-তালে,
পূজারিণী বৌ যেখানে
ঘর-করনা পালে,
লক্ষ্মী আসে আপনি সেথায়
পদ্মশঙ্খ নিয়ে,
কৃষ্টি-দোলায় দুলিয়ে তোলে
জীবন-জ্যোতি দিয়ে। ৩৭।
ভক্তিভাজন শ্বশ্রু-শ্বশুর
পূজ্য দেব-দেবীর,
তাঁদের প্রতি সেবাশীলা
করবি যে তদ্বির,
প্রাণের উৎস পরশ পেয়ে
যেমন সুখী ওঁরা,
সন্তানও তোর প্রতি তেমন
হবেই ভক্তিভরা। ৩৮।
পিতা, মাতা, গুরুজনে
বউ-এর সেবা পেল না কেউ,
স্ত্রী তোর সে কেমনতর?
বাঘের সঙ্গে যেমনি ফেউ। ৩৯।
শ্বশুর-শাশুড়ী যেমনই হ’ন্
ভক্তি-সেবায় অনুক্ষণ,
তাঁ’দের অভাব-প্রয়োজনে
সবার আগে কর পূরণ;
রাখবি তাঁ’দের দীপ্ত ক’রে
নিয়ত রাখবি এইটি ধ’রে,
এমনি করে যতই চলবি
ক্রমে-ক্রমেই দেখবি বুঝবি,
কত জঞ্জাল-আবর্জনা
পেয়ে নিছক মার্জনা,
উছল প্রাণে তৃপ্তিভরে
রাখবে তোরে দীপ্ত করে। ৪০।
শ্বশুর, ভাসুর, দেবর, ননদ
এদের প্রতি যেমন,
কথাবার্তা সেবা-কায়দা
প্রাণের প্রসারণ;
যেমনভাবে করবি আপন
অভ্যাস-ব্যবহার,
সন্তানেরও হৃদয়টি তোর
ফুটবে সে-প্রকার। ৪১।
স্বামী-সম্পদ দৈন্যে দলিত
না হয় এমনভাবে,
পিতৃকুলের নাশিতে আপদ
কভু না বিরতি পাবে। ৪২।
স্বার্থ-ব্যাহত ধৃষ্ট-কুটিল
হইয়া শ্বশুরকুল,
পিতৃকুলেরে অযথা পীড়িলে
নাশিও তাহার মূল। ৪৩।
শ্বশুরকুলের ঋদ্ধি যেথায়
আঘাতে পিতৃকুল,
প্রাণপণে তা’র নিরসনে করো
সিদ্ধ শ্বশুরকুল। ৪৪ ।
পিতৃকুলের দুর্দিনে নারী
শ্বশুর-গৌরব বাহিয়া,
স্মিত বদনে অভয়ে দাঁড়াও
পিতৃদৈন্য নাশিয়া। ৪৫।
পিতৃকুলের সঙ্গতি যদি
শ্বশুরকুলে না দলে,
সে-সঙ্গতি নারী প্রাণ-উপচারে
সাধিও যাহাতে ফলে। ৪৬।
মাতৃত্বটি সত্যি সজাগ
জানিস্ মেয়ে সেইখানে,
পরের ছেলের দরদ-ব্যথায়
মাতৃ-ঝলক যেই প্রাণে। ৪৭।
সত্তাপ্রতীক একই পুরুষ
যত নারীর রয়,
সম্বন্ধে সতীন হয় তাহারা
সমসত্তা বয়;
অবলম্ব আশ্রয় এক
একই স্বার্থ একই টান,
বেদন-ব্যথা একই তা’দের
সার্থকতার একই স্থান;
এ-বোধ যখন অবশ-কাবু
বৃত্তি-রঙ্গিল স্বার্থ-কুটিল,
বাতুল-বেভুল দুৰ্দ্দশাতে
নারীর জীবন হয়ই জটিল। ৪৮।
স্বামীর টানে মনটি আছে
সতীনে নাই সম্প্রীতি,
স্বামীর টানটি স্বার্থ-কুটিল
মিথ্যাচারী দুর্নীতি। ৪৯।
সমান ব্যথার দরদী সতীন
সমান সুখের মূর্ছনা,
সমান ঝঙ্কার প্রাণ বেয়ে
যায় হ’লেও ভিন্ন সৰ্জনা। ৫০।
সতীন-পেটের ছেলেমেয়ে-
নিছক নিজের ব’লেই জানিস্,
পালন-পূরণ করবি তা’দের
অটুটভাবে এইটি মানিস্। ৫১।
জ্যেষ্ঠা সতীন যত্ন করে
সুখ-সুবিধা ছোট্টদের
না দেখলে তা’য় অলক্ষ্মীতে
উবেই আভা সম্পদের। ৫২।
সতীন-ছেলে নয়কো নিজের
এমন কথা ভাববি না,
স্বামীর সত্তা উড়িয়ে দিতে
এমন কিন্তু বলবি না। ৫৩।
পিতৃকুলেতে অবজ্ঞা ঢালিয়া
শ্বশুরকুলের ভজনা,
শুভ আমন্ত্রণ-হারা হয় নারী
ব্যতীপাতে ক্ষয় সাধনা। ৫৪।
বাপের বাড়ী হামেহাল
থাকলে নারী পয়মাল। ৫৫।
বাপের বাড়ী পুষলে মেয়ে
পুষ্টবৃত্তি মাথা তোলে,
প্রবৃত্তি তা’র বশ থাকে না
প্রায়ই নষ্ট অনেক স্থলে। ৫৬।
বাপের বাড়ী থাকে ভাল
সেই গৌরবে তৃপ্তি পায়,
শ্বশুর-গর্ব্বে প্রাণ নাচে না
অপটু তাঁ’য় রাখতে বজায়;
নারী এমন কুলক্ষণের,
জন্ম-জীবন নয় পূরণের,
গড়ন-আবেগ নাই সে-নারীর
দৃপ্ত সম্পদ ক্ষয়েই ধায়। ৫৭।
মেয়ের চাকরী মহা পাপ
বিপর্যস্ত শ্বশুর-বাপ। ৫৮।
অসতীত্বের কুয়াসী স্তর
মেয়ের চাকরী করা,
ধী-টি জানিস আবছা হ’য়ে
লোভেই পড়ে ধরা। ৫৯।
যে-মেয়েরা চাকরী করে
জনন-জাতি তা’রাই হরে। ৬০।
বৃত্তিঝোঁকা হ’লেও নারী
বংশে উচ্চ হ’লে,
শ্রেষ্ঠ-পানে ধায়ই নজর
নীচকে ঠেলে চলে। ৬১।
বৃত্তি অবশে যে-নারীর
নষ্টে নম্য, মতি অস্থির। ৬২।
স্বামী ছাড়া পুরুষপ্রাণা
মারছে উঁকি নষ্টাপানা। ৬৩।
নষ্টা নারী তা’রেই কয়
স্বামী ছেড়ে যে অন্যে বয়। ৬৪।
স্বামীদ্বেষিণী নারী যা’রা
প্রসব করে কু,
আদর্শহীন হ’লে পুরুষ
বৃত্তিমুখী মেকু। ৬৫।
পরের বাবা, পরের দাদা
পরের মামা বন্ধু যত,
এদের বাধ্য-বাধকতায়
সম্বন্ধটি যাহার যত;
অনুরোধ আর উপরোধে
ব্যস্ত সারা নিশিদিন,
কামুক মেয়ে তা’কেই জানিস্
গুপ্ত কামে করছে ক্ষীণ। ৬৬।
বৃত্তিলোলুপ আবিল চাওয়ায়
স্বার্থ-শোভার প্রয়োজন,
কুট্নিগিরি ক’রে যবে
অবশ করে মেয়ের মন;
সেই ফাঁদেতে নিজে প’ড়ে
অসতী হয় মেয়ে–
বৃত্তিতাড়ায় সকল হারায়
অধঃপাতে যেয়ে। ৬৭।
নারী যখন পুরুষ নিয়ে
বন্ধুবান্ধবতায়,
ভাববিলোলী সহানুভূতি
সেবায় এগিয়ে যায়;
নারীর ব্যথায় নাই কোন টান
ব্যস্ত পুরুষ নিয়ে,
অলক্ষিতে কাম-পেত্নী
ধরেছে তা’রে গিয়ে। ৬৮।
অসতীত্বের কুটিল ঝোঁকই
ছাড়ায় আপন কুলে,
মানগরবী দম্ভদাবী
কুলটা ক’রে তুলে। ৬৯।
স্বামীছাড়া পুরুষ-সঙ্গে
গোপন-পথে ঘরে,
যেতে নাইকো জানিস্
মেয়ে রাখিস্ মনে করে। ৭০।
স্বামী ছেড়ে পুরুষান্তরে
গেলে টান তা’য় ধরলে পরে,
কামবিলোলী অবশতায়
মেয়েরা সতীত্ব হারায়। ৭১।
ভ্রষ্টা নারী তা’রেই জানিস্
স্বামী ছেড়ে যেই,
বৃত্তিটানের কুহক নেশায়
পরের ধরে খেই;
পাতিব্রত্য ভানেই থাকে
ভজে অন্য পুরুষ,
গোপন উপপত্নী হয়
ভ্রষ্টা মেয়েমানুষ। ৭২।
পাতিব্রত্যে হ’লেও পতিত
স্বামীর কুলেই ভ্রষ্টা র’য়ে,
বৃত্তিঘাতী অনুতাপে
পতিপ্রাণতায় আরো হ’য়ে,
প্রায়শ্চিত্তে যথাবিধি
হ’তে থাকলে চলায়মান,
লোকচক্ষুর অজানপথেই
হ’য়ে থাকে তার উত্থান;
কিন্তু যদি পুনঃ-পুনঃ
দিশাহারা বৃত্তিচাপে,
ভ্রষ্টপথেই চলতে থাকে
কৃতঘ্নী হয় রিপুর দাপে
অশেষ পাপের নিঠুর আঘাত
জীবন-জনন করেই নিপাত,
এখনও নারী সাবধান হ’
পতির চর্য্যায় অটুট র’। ৭৩।
একমুখতায় অবহেলে
বৃত্তিমুখী গেলি হ’য়ে,
তাই অসতী তরল মতি,
শ্রেষ্ঠ একে চল্ ব’য়ে। ৭৪।
অসতী হ’লেই সর্ব্বনাশ
কুলটার তো আরও,
দ’গ্ধে-দ’গ্ধে সে তো মরেই
মরণ সমাজেরও। ৭৫।
অসতী যদি হয়ই কেউ
হয় না যেন কুলটা,
মরবে তা’তে দ’গ্ধে ওরে
বাড়বে তা’তে পাপ-ঘাটা। ৭৬।
পাগলী বেকুব মেয়ে আমার !
যদি অসতী হ’য়েই থাকিস্,
অনুতাপের আগুন জ্বেলে
ইষ্টানুগ তপে ফেলে
বৃত্তি-আবিল মন-কুলটায়
আগেই নিকেশ করিস্। ৭৭।
কুলটাও যদি হয়েই থাকিস্
বর্ণঘাতী হ’স্ না,
নীচের অনুগমন ক’রে
কুজননে সমাজ ভ’রে,
অপার নরক সামনে ক’রে
আরও নরকে ধাস্ না। ৭৮।
শয়তানেরই কুহকী চর
মেয়ে তোদের সর্ব্বনাশে,
কাঁপিয়ে দিয়ে আর্য্যদেবে
বিক্ষোভিত করে ত্রাসে;
এখনও তোরা নিঝুম ঘুমে?
ছোট্ রে দিয়ে অট্টহাস,
লক্ষ্যভেদী পদাঘাতে
বর্শা ছাড়ি’ কর্ নিকাশ। ৭৯।
ধর্ষণমুখী যদিই বা হ’স্
পরাক্রমী মেয়ে,
মারবি না হয় মরবি তখন
রাখিস্ কীর্ত্তি ছেয়ে ! ৮০।
ইতর নীতির প্রগতি-পথ
শম্ভূশূলে কর্ নিরোধ,
মেয়ে আমার,
সতি আমার !
খড়াশূলে রোধ বিরোধ। ৮১।
বহ্নিশিখায় খোপা বেঁধে
পাপহননী ত্রিশূল ধর্,
সিংহ-ধাওয়ায় খড়গ নিয়ে
অসুরবুদ্ধি নিপাত কর্। ৮২।
শার্দুলেরে বাহন ক’রে
সাপের ফণার মালা প’রে
কালবোশেখী ঝঞ্ঝাবেগে
ছোট্ রে নারী ছোট্ রে ছোট;
দত্যিদানার নীচবাহানা
আর্যাবর্তে দিয়ে হানা
ঘূর্ণীপাকের বেতাল গাঁথায়
হুলিয়ে-ভুলিয়ে দিচ্ছে চোট;
দশপ্রহরণ দশহাতে ধর
বক্ষ বিদরি’ ধ্বংসি’ ইতর,
সূর্য্যরাগী বজ্র তেজে
আর্য্যনারী ! শত্রু টোট্। ৮৩।
বুকের আগুন দাউদহনে
সাধ্বী মেয়ে জ্বালিয়ে তোল্,
বৃত্তিজ্ঞানীর ইতর নীতি
পুড়িয়ে হুলুর করবে রোল। ৮৪।
ওরে সতি ! সাধ্বী মেয়ে !
আর্য্যনীতির ব্যাঘাত যা’,
সাপের মুখে চুমুক দিয়ে
উগ্র সে-বিষ নাম্ রে তা’। ৮৫।
সাধ্বী তোরা নারী তোরা
ফাগুন রাগে আগুন জ্বাল্,
দুর্ব্বিনীত ইতরামি যা’
জ্বালিয়ে ফ্যাল্ পুড়িয়ে ফ্যাল্। ৮৬।
শঙ্খ ফুঁকে অমর হাঁকে
উচ্চ রোলে পুরুষ-বুক,
তাথৈ থিয়ায় নাচাও নারী
বর্ম্মে ঢেকে মৃত্যুমুখ। ৮৭।
আর্য্যকৃষ্টি-মাতাল সাড়ী
পর্ রে আর্য্য মেয়ে,
আর্য্যগর্ব্বে গরবিনী
চল্ দোদুলে ধেয়ে;
অমৃতেরই ভাণ্ড করে
পদ্মবনে অমর স্বরে,
ছেলেপিলেয় কৃষ্টি-হাওয়ায়
অমর মদির কর্ যেয়ে। ৮৮।
সতীর তেজে ঝলসে দে মা
নিঠুর-কঠোর অন্ধকারে,
মদন-ভস্ম বহ্নি-রাগে
বৃত্তিরিপু দে ছারখারে;
প্রণবতালে ইষ্ট-মন্ত্রে
ঝঙ্কারি’ তোল্ সকল তন্ত্রে,
বিষাণ-হাঁকে রুদ্র দোলায়
বজ্র হানি’ মৃত্যুদ্বারে;
আয় ছুটে আয়, আয় মা আমার !
ধর দীপকে আর্য্যতান,
ফুলিয়ে তোল্, দুলিয়ে তোল্
তাথৈ তালে আর্য্যমান। ৮৯।
বিবাহ
বিবাহ
ইষ্ট-স্বার্থপ্রতিষ্ঠা যা’র
পরিণয়ের মূলে,
তা’রই বিয়ে সার্থক হয়
বংশ ওঠে দুলে’। ১।
বিয়ে-ব্যাপারে সবার আগে
বর্ণের হিসেব করিস্,
তা’র সাথেতেই বংশটিকে
বেশ খতিয়ে দেখিস্;
বংশ দেখে শ্রদ্ধা হ’লেই
স্বাস্থ্য দেখিস্ কেমন তা’র,
তা’র সাথে তুই বাজিয়ে নিবি
স্বভাব-অভ্যাস-ব্যবহার;
এ-সবগুলির সুসঙ্গতি
মিলেই যদি যায়,
বিদ্যা দেখিস নজর ক’রে
কর্ম্মের ওজন তা’য়;
পারম্পর্য্যে এইগুলি সব
মিলিয়ে দিলে বিয়ে,
প্রায়ই দেখিস্ ঠকবি না তুই
মরবি না বিষিয়ে। ২।
যে-পুরুষে করলে বিয়ে
শ্রেষ্ঠ পানে ধাও,
হৃদয় খুলে যা’র কাছেতে
দীপন পুষ্টি পাও,
বংশে শ্রেষ্ঠ পিতৃতুল্য
কিংবা শ্রেষ্ঠতর,
সেই পুরুষে করলে বরণ
হবে না ইতর। ৩।
ইষ্টানুগ নতি তুমি
যেথায় দেখতে পাবে,
কৰ্ম্মকুশল দক্ষ-নিপুণ
শ্রদ্ধা-ভক্তি ভাবে,
শ্রেষ্ঠ বংশ-সমুৎপন্ন
নাই ঠুনকো মান,
স্তুতিতে ভ’রে উঠবে বুক
করলে আত্মদান। ৪।
সৎস্বভাবে পরাণ-পাগল
সেই তো রে তোর বর,
সব দিকে তোর শ্রেষ্ঠ হ’লে
তা’রেই বরণ কর্। ৫।
সৎপুরুষে করবে বরণ
জননক্ষম নারী যখন,
তবেই জন্মে সেই ক্ষমতা
এই তো শাস্ত্র-নীতির কথা। ৬।
রজস্বলা হ’লেই নারী
বর-বরণে অধিকারী। ৭।
উচ্চবর্ণে দিলে মেয়ে
তাঁ’দের নিয়ম-নীতির ধাঁজে,
চলাই শ্রেয় কড়া নিয়মে
আচার-বিচার কথায়-কাজে। ৮।
উচ্চ বংশে মেয়ের নতি
তুখোড় ঝাঁঝাঁল হয় সন্ততি। ৯।
মাতৃবর্ণে যা’রই যে-থাক্
সে-থাক্ সহ নিম্নপানে,
করলে বিয়ে পুরুষজাতি
প্রাজ্ঞ শ্রেয় পায় সন্তানে। ১০।
পিতৃবর্ণে যা’রই যে-থাক্
সে-থাক্ হ’তে উচ্চপানে,
মেয়ের বিয়ে হ’লেই জানিস্
বাড়বে শিশু বীর্য্যে জ্ঞানে। ১১।
কেহ তোরে আবেগভরে
ব’য়েই সুখী হয়,
বওয়া-সওয়ার কষ্ট যত
সুখের করেই লয়,
শ্রদ্ধা-ভক্তি আনতিতে
ন্যস্ত করে মন,
আত্মদানে করতে চাইলে
তোরে রে বরণ,
সে যদি তোর ইষ্ট কাজে
বাধা না ঘটায়,
নিস্ তা’রে তুই বুঝেসুঝে
ফিরাস্ নাকো তা’য়। ১২।
পূর্ব্বপুরুষ-সংস্কার যা’
স্বল্প বিস্তরে,
অনুক্রমে আসছে নেমে
বিয়ে-সূত্র ধ’রে;
ঐগুলি সব ব’য়ে সুখী
এমন মেয়ে নিয়ে,
তা’তেই তুমি পুষ্টি পাবে
সেই তো যোগ্য বিয়ে। ১৩।
বড় কিংবা ছোট নিয়েই
বিয়ের নীতি সিদ্ধ নয়,
যৌন-জনন সার্থক যা’তে
সেই বিয়েই শ্রেষ্ঠ হয়। ১৪।
গৌরব জয় উপঢৌকনে
ইষ্টস্বার্থে পুরুষ ধায়,
ধারণ, রক্ষণ, প্রেরণা, সেবায়
নারী যবে তা’র পিছনে যায়,
মূর্তিমতী লক্ষ্মী সেখানে-
নারীজীবন বৃদ্ধি গায়। ১৫।
গৌরব-মুখর পূরণ-গড়ন
আহরণেচ্ছু যতেক নরে,
বরণ-অর্ঘ্য বৃদ্ধি সমীক্ষে
চলে নারী দিতে পালন বরে। ১৬।
এককে নিয়েই ডুবে থাকা
এই তো নারীর ধাঁচ,
বহুস্ত্রীতে সম মমতা
মুখ্য পুরুষ ছাঁচ। ১৭।
অটুট কঠোর আদর্শে যে
বহুবিবাহে সমর্থ সে,
পুরুষে যখন না দেখবি তা’-
একটিরও নাই উপযোগিতা। ১৮।
সৃষ্টি যা’ সব আত্মায়ন
মানুষ ঋদ্ধি-প্রবণ,
তেমনতরই পায় সকল জীব
যেমন করে বরণ। ১৯।
মেয়েরা যদি স্ব-ইচ্ছাতে
বরে না সৎবরে,
কা’র বউ কা’র ঘরে যায়
ঠিক পাবি কি করে? ২০।
শোন্ রে বলি শোন্ ওরে শোন্
আমার অবোধ মেয়ে,
অহং-আহত ঈর্ষা-ক্ষিপ্ত
ইষ্টহারা বৃত্তিলিপ্ত
হোমড়া-চোমড়া হোক না যত
থাকিস্ দূরেই পারতমত,
বৃত্তিজ্ঞানীর বেকুব কথায়
বিয়ে করিস্ না যেয়ে। ২১।
বিয়ের আগে পড়লে মেয়ের
অন্য পুরুষে ঝোঁকের মন,
স্বামীর সংসার-পরিবার
করতে নারে প্রায়ই আপন। ২২।
সবর্ণে সগোত্রে বিয়ে
দিসনে কোনদিনও ভুলে,
করবে বংশ জরাজীর্ণ
অসংবদ্ধ গুণবহুলে। ২৩।
পরিচয়ী টানের পূর্ব্বে
কিংবা ঋতু হওয়ার আগে,
নিরুদ্দেশে স্বামী পালায়
পরিণীতা বধূত্যাগে;
কিংবা নষ্টমৃত হ’লে
নয়তো ক্লীব জানা গেলে,
ম্লেচ্ছ নীতি আঁকড়ে ধ’রে
ইষ্টকৃষ্টি ফেলে ঠেলে,
এমন পতিত বরকে ছেড়ে
যদি ইচ্ছা ধরবে শ্রেয়,
দুঃখে স্মৃতি দিলেন বিধি
যদিও এটা অনেক হেয়। ২৪।
ত্যক্তা নারীর আবার বিয়ে
দৃপ্ত বুকে ক্ষিপ্ত ফণা,
গলায় প’রে পুরুষ বেড়ায়
প্রিয়বুকে সটান টনা। ২৫।
অসতীত্বের উপচয়ে
বাতিলই যদি হয় বিয়ে,
সমশ্রেষ্ঠ পুরুষেতে
করে রে নির্ভর,
লোকসমক্ষে বিয়ে করিস্,
অববধূ হ’য়ে থাকিস্,
উন্নতিকে অবাধ সাধিস্
করে তা’রই ঘর। ২৬।
শ্রেয়ে কন্যা দিয়ে যদি
হরণ করে মনের পাকে,
স্মৃতির বিধান চৌর্য্যদণ্ড
বইতে হবে নিশ্চয় তা’কে। ২৭।
সংশ্লেষতা যেথায় যেমন
দুঃখ ও সুখ তেমনি সেথায়,
রাগ-বিরাগের এমনি চুমোয়
মানুষ মরে দ’গ্ধে ব্যথায়। ২৮।
নারী-লোলুপ পুরুষ যা’রা
উদ্বাহেতে তা’দের ধ’রে,
বিদঘুটে এক জীবন-চলায়
চলেই নারী জ্যান্তে ম’রে। ২৯।
পুরুষ যা’রা বিয়ের নেশায়
বিয়ের আসর জমিয়ে রাখে,
চপল কামুক বিয়ে পাগলার
গোঙরানি সার কামের ডাকে। ৩০।
কাম-আচারে পুরুষঘেঁষা
কন্যা বিয়েয় শ্রেষ্ঠ নয়,
অমনি বিয়েয় জন্ম হ’লে
জাতক-জীবন ক্ষুণ্ণ হয়। ৩১।
প্রিয় পাওয়ার ঝোঁকের তাড়ায়
সমত্ব-সঙ্গতি ছাড়া,
বৃত্তিমাফিক চায় প্রিয়কে
প্রিয়র স্বার্থে দৃষ্টি-হারা,
টানটি সহ বুদ্ধি তখন
বিক্ষোভে হয় জর্জরিত,
বৃত্তিরঙ্গিল প্রেষ্ঠ পাওয়া
হ’য়েই থাকে কণ্টকিত। ৩২।
উন্নয়ন আর সুপ্রজনন
এই তো বিয়ের মূল,
যেমনি-তেমনি ক’রে বিয়ে
করিস্ না কো ভুল। ৩৩।
সমান বিয়ের সাম্য ধাঁজ
অনুলোমে বাড়ায় ঝাঁঝ,
প্রতিলোমে কুপোকাৎ
বিশ্বাসঘাতক বংশপাত। ৩৪।
কী কুক্ষণে অনুলোমী
অসবর্ণ বিয়ে,
বাতিল করলি বেকুব সমাজ-
কিসের দোহাই দিয়ে?
ইষ্টস্বার্থী শিক্ষারেই বা
তফাৎ করলি কিসে?-
এই ক’রে যে সব খোয়ালি
হ’লি হারাদিশে। ৩৫।
অনুলোমী সদ্যদীপন
পাঞ্চজন্য বাজিয়ে আন,
দৈন্যভরা সংস্কারীকে
সূর্য্যতপায় করা স্নান। ৩৬।
ভুলে অশ্রেয়ে কন্যা দিলে
হরণ ক’রে শ্রেয়ে দিবি,
আর্য্য-স্মৃতির এই তো নীতি
ঋষির কথা মেনে নিবি। ৩৭।
অনুলোমী অসবর্ণার
গর্ভের তনয়,
স্বামী-বর্ণই পেয়ে থাকে
থাকের তফাৎ হয়। ৩৮।
পুরুষের বিয়ে নিম্ন ঘরে
উন্নতিতে সমাজ চড়ে। ৩৯।
অনুলোমী স্ত্রীদের আছে
সেবায় অধিকার,
দেবকার্য্যে পিতৃকার্য্যে
সবর্ণাই সার। ৪০।
একান্তরা অসবর্ণা
থাকলে সদাচারে,
ভোজ্য-পান তাহার হাতে
সবই চলতে পারে। ৪১।
পুরুষের বিয়ে উচ্চ ঘরে
বাড়ে আপদ বংশ মরে। ৪২।
নিম্নবর্ণে নারীর ঝোঁক
এর বাড়া নেই ঘৃণ্যগতি,
ইতর-ঝোঁকা দুষ্টা চেয়ে
ঢের ভাল যা’র উচ্চে রতি। ৪৩।
উঁচুর মেয়ে নিসনে ঘরে
দিস্ উঁচু বরে,
ঘরে থাকবে লক্ষ্মী বাঁধা
জনে থাকবি ভরে। ৪৪।
উঁচুর মেয়ে নিলে ঘাড়ে
দিলে নিম্ন বরে,
বংশ মরে লক্ষ্মী ছাড়ে
রাষ্ট্রে আঘাত পড়ে। ৪৫।
উঁচুর মেয়ে নিলে ঘাড়ে
বংশ নাশে লক্ষ্মী ছাড়ে। ৪৬।
প্রতিলোমে মত্ত-মসগুল
সমারোহে রইলি তুই,
ভাবলি না রে ছোট ধ’রে
নষ্টে চ’লে যাচ্ছিস্ নুই’,
মাথাতোলা সৃষ্টি-জনন
এমনি করে করলে ক্ষয়,
আর্য্য তোরা দ্বিজ তোরা
সর্ব্বনাশেই পাবি লয়। ৪৭।
প্রতিলোমী স্পর্শে নারী
নষ্টা হওয়ার চেয়ে,
অনুলোমে দুষ্টা হ’লেও
উচ্চে চলে বেয়ে;
দুষ্টা হ’লেও হৃদয়টি তা’র
শ্রেষ্ঠ উদ্দীপনায়,
জাত-সমাজের করেই ভাল
সৎ-এর উচ্ছলায়;
তাই তো বলি মেয়ে আমার
প্রতিলোমে ধাস্ না,
ছোট হ’য়ে নীচু হ’য়ে
মরণপথে যাস্ না। ৪৮।
অবিনশ্বর আত্মধারা
ছিট্কিয়ে ক্ষয় হয় কিসে-
জানিস্ তা’ কি বেকুব পাগল?
প্রতিলোমে নর যেই মিশে। ৪৯।
থাকলে বংশে প্রতিলোমী ছিট
মেয়েদের যায় নীচোয় দিঠ। ৫০।
বাঘের মুখে দিস্ রে তুলে
অজগরের আহার দে,
অপমানী নীচ-সৃজনী
প্রতিলোমী বৃত্তিবাদে। ৫১।
অযোগ্যা অগম্যার যদি
কোন পুরুষে টানও থাকে,
টানের নেশায় পুরুষ যদি
মনন-গ্রহণ করে তা’কে;
সে-পুরুষের পাতলা স্নায়ু
ধ্বংস করে মস্তিষ্কটা,
ব্যক্তি-সমাজ-রাষ্ট্রে করে
সর্ব্বনাশে একসাপটা;
বৃত্তিনেশায় সবায় মারে
এ পাপ পুরুষ বয় কিনা,
সবায় মেরে কী হয় সাজা
দেশ-সমাজ তা’ সয় কিনা। ৫২।
বৃত্তিঝোঁকা হ’লেও মেয়ে
বংশে উচ্চ হ’লে,
শ্রেষ্ঠপানেই ধায় নজর তা’র
নিম্নে মন না টলে। ৫৩।
অধম নরে নারীর ধাওয়ায়
মরণ ছোটে পিছে,
নীচ জননে বংশ নাশে
জীবন তাহার মিছে। ৫৪।
শাক্ত বৌদ্ধ মুসলিম খৃষ্টান
বৈষ্ণব যা’ই হ’স্ না,
প্রতিলোমে বরণ করে
বৈশিষ্ট্য ছেড়ে ধাস্ না। ৫৫।
পিতৃকৃষ্টি গৌরব-গানে
গর্ব্বে নাচে না যা’দের প্রাণ,
জাতীয়-জীবন বীর্য্য-কাহিনী
বোঝে না, কহে না, গণে অপমান;
একই ইষ্টে নাহি অনুরতি
পর-গৌরবী যাদের ধাঁচ,
প্রতিলোমে যা’রা উচ্চ উদার
গোল্লায় তা’দের জনম-ছাঁচ। ৫৬।
পুরুষ-নারী সবাই শোনো-
কোনপ্রকার প্রতিলোমে
বিয়ে বা গমন ক’রো নাকো
ক’রো না পুষ্ট কুটিল যমে,
অতি সুন্দর অটুট প্রার্থী
প্রাপ্তি-প্রীতি যদিও হয়,
দূরেই থেকো, এগিও নাকো,
রাষ্ট্র-সমাজ ওতেই ক্ষয়। ৫৭।
উচ্চবর্ণ বংশ বরে
নিম্নজাতা মেয়ের বিয়ে,
অনুলোম তা’কেই বলে
সমাজ যা’তে যায় উজিয়ে। ৫৮।
আগ্রহ-উদাম সমধর্মী
বিপরীতে পরিণয়,
শিষ্ট অনুলোমী হ’লে
বিশিষ্টই উপজয়। ৫৯।
বীজ পেল না ক্ষেত্র সারী
যেমন তাহার লাগে,
ফসল পাবি ওরে লোভী
কোন্ কর্ম্মের বাগে? ৬০।
প্রয়োজন-পূরণে স্বামীতে টান
ব্যক্তিত্বে টান নয়,
এমন প্রিয়ার প্রিয় যিনি
হবেই তাহার ক্ষয়। ১৩।
প্রবৃত্তি ইন্ধন ক’রে
ইষ্টে স্বামীকে বয় না,
ঠিক জানিস্ সে ডাইনীর
সবই খাবার বায়না ! ১৪।
স্বামীর ব্যথায় বুক ফাটে না
চমকে নাকো মন,
হৃদয় উজাড় ক’রে তাঁ’তে
তাঁরই স্বার্থ প্রতিষ্ঠাতে, বু
ক দিয়ে যে-করে নাকো
স্বামীর সম্পূরণ,
এমন নারী যাহার ঘরে
আপদ তা’র কি কভু সরে?
চলেই চলে সে ছারখারে
হুতাশে ডোবে মন। ১৫।
পুরুষ মাগে নারীর প্রণয়
নারী মাগে টাকা,
এমনি ক’রেই চল্তি জগৎ
বাঁচাবাড়ায় ফাঁকা। ১৬।
স্ত্রীর কথায় যে ওঠে-বসে
রঙ্গিল চক্ষু যা’র,
খুঁজে-পেতে মিলিয়ে বুঝে
দেখে না কিছু আর,
মেয়ে-মুখো নেংটে পুরুষ
মেয়েলী ফেনচাটা,
আত্মঠগী বেবুঝ পাগল
কপালে মুড়ো ঝাঁটা। ১৭।
যোগ্যগম্যা নারীকেও যদি
ফুসলিয়ে বা বলাৎকারে
অনিচ্ছায় তা’র বৃত্তি-টানে
স্পর্শন-ধর্ষণ করে তা’রে;
স্নায়ুতন্ত্র বিকার-বশে
নিরেট শিথিল অবশতায়,
ধ্বংস ক’রে জাত-সমাজে
জীবন কাটায় পাপ-লালসায়। ১৮।
স্ত্রী যদি না দেখায় ঝোঁক
কামকামনার উচ্ছলায়,
কামভাবেতে রাখিস্ না মন
র’বেই স্নায়ু সচ্ছলায়। ১৯।
স্ত্রীর আকৃতি দীপ্ত করে
আদর-অবশ অনুরাগে,
উপগতির সেই তো সময়,
নয়তো রোগে ধরবে বাগে। ২০।
স্ত্রী চাহিদায় সহবাস
করলে শক্তির কমই হ্রাস;
পুরুষ ছোটে নারীর পিছে
খোয়ায় শক্তি মেধা মিছে। ২১।
পুরুষ ধায় তা’র ইষ্টপানে
নিয়ে পড়শী জগৎখানা,
স্ত্রীও তেমনি স্বামী-বহনে
এক আদর্শে চলায়মানা;
এ যেথায় না হয়-
আবোল-তাবোল ঘূর্ণী ঘোরে
হ’তেই থাকে ক্ষয়। ২২।
স্ত্রী যদি তোর দোষই দেখে
অবজ্ঞাতে আদর জানায়,
দূরে থাকিস্ তা’ ছেড়ে তুই
পড়বি নইলে দুৰ্দ্দশায়। ২৩।
লাখ জ্বালাতন হ’স্ না রে তুই
স্ত্রীর অনুচিত তর্জনায়,
তুষ্ট তা’তে নাই বা র’লি
থাকিস্ না তা’র তোয়াক্কায়। ২৪।
স্বামীর প্রতি যেমনি রতি
তেমনি নারীর মতিগতি। ২৫।
সমীহহীন স্বামী-সঙ্গ
শ্রদ্ধহৃদয় নয়,
প্রবৃত্তিতেই স্বামিত্ব যা’র
ছেলেও তেমনি হয়। ২৬।
দাম্পত্য জীবন
দাম্পত্য জীবন
বৈশিষ্ট্য উদ্দাম যেথা
অবাধ আদান,
উদ্বুদ্ধ আদর্শানতি,
স্ত্রী-পুরুষে একই রতি,
ইষ্ট উদ্বোধনে করে
উভে আত্মদান;
এমন স্থলেতে
মূর্ত্ত হয় ভগবান,
অমরণ নীতি-পথে
করে আগুয়ান। ১।
সজীব যেমন যৌন-জীবন
সুন্দর সদাচারী,
দীপ্ত কৃতী তেমনই সে-জন
আয়ুর অধিকারী। ২।
পতিপ্রাণা দক্ষা নারীর
সেবাসুন্দর তৃপ্তি-চলন,
পুরুষ-বুকে দীপ্তি আনে
বৃদ্ধিতে দেয় উপঢৌকন। ৩।
তৃষ্ণাভরা তৃপ্তবুকে
স্বামীর প্রতি অনুরাগ,
এমন নারীর সহবাসে
বর্দ্ধনা পায় পুণ্য ফাগ। ৪।
শতেক কাজের সমাধানেও
স্বামীচর্য্যায় হয় না বাধা,
পতিপ্রাণা নারীজীবনে
দেখবি কেমন এইটি সাধা। ৫।
লক্ষ কাজে ব্যস্ত থেকেও
স্বামী সোহাগভরে
কোন্ ফাঁকেতে সময় করে
স্বামীর তোয়াজ করে,
আলোচনায় সৎকথাটি
উদ্দীপনী রতি,
এমনি মেয়েই লভে নিশ্চয়
শ্রেষ্ঠ সুসন্ততি। ৬।
অযুত কাজের মাঝ থেকেও
আগ্রহেরই বলে
উদ্দীপনী আবেগ নিয়ে
বুদ্ধি-সুকৌশলে,
ফিকির ক’রে সোহাগ-স্তুতির
সদালাপী উদ্দীপনা
আনে স্বামীর হৃদয় প্লাবি’
সৎ রতিটির সু-এষণা;
শতেক বাধা নিরাশ ক’রে
দীপন রাগে হ’লে রত,
জীবন-জয়ে বাড়ে স্বামী
সুপুত্র হয় বিধিমত। ৭।
স্বামীর ভাল করতে গিয়ে
স্ত্রীর সতীত্ব জাগে,
ইষ্টস্বার্থ-প্রতিষ্ঠাতেই
পুরুষ সৎ-এ থাকে। ৮।
নিজ সত্তার প্রতীক পুরুষ
সেই তো নারীর স্বামী,
তা’রই জীবন-সাথী নারী
ধৰ্ম্ম-অনুগামী। ৯।
ভক্তি-সেবায় আত্মত্যাগ
স্বামী-ধৰ্ম্মার শ্রেষ্ঠ যাগ। ১০।
স্বামী-স্বার্থে অটুটগতি
অবশ মনটি নয়,
ফন্দি-ফিকির ঐ তালেতেই
স্বামী উদ্দীপয়;
সদাচারে অটুট নিষ্ঠা
ইষ্টে প্রীতি যা’র,
জীবন-কাজে ধর্মনীতি
প্রীণন-ব্যবহার;
সদালাপী স্বামী-আনতি
উছল-প্রাণা যেই;
দীর্ঘজীবন রত্নগর্ভা
জানিস্ নারী সেই। ১১।
সব প্রবৃত্তি ভেদ ক’রে টান
স্বামীতে যেই ধরবে,
সতীলোকের প্রথম ধাপে
তখনই তুমি চড়বে। ১২।
জনন-নীতি
জনন-নীতি
কৃষ্টিজাত সংস্কারের জৈবী সংগঠন
সৃষ্টি করে রজোবীজের ধরন-ধারণ,
বিসদৃশ সম্মিলনে অসমত্বে ধায়
সমত্বকে হারিয়ে ফেলে বিকৃতিতে পায়। ১।
মৃত্যুকালে যে-ভাব ধ’রে
ছেড়ে শরীর যায় জীবন,
জন্মে আবার তেমনি স্থানে
ওই ভাবের পথ পায় যখন। ২।
অতিদৈহিক সত্তা জানিস্
কাম-কামনার ভরে
ঘন হ’য়ে শুক্রাণুতে
বীজ-শরীরটি ধরে,
শুক্রাণুটি সঙ্গত তা’র
ডিম্বকোষে মেশে,
কোষ-বিভাগে বেড়ে ওঠে
বৈশিষ্ট্যতে ভেসে। ৩।
এক নিষেকে রেত-শরীরী
অযুত জীবন ধায়,
ডিম্বকোষটি যেমন ধরে
তেমনি শরীর পায়;
জীবাণুটি লিঙ্গ-শরীর
কামের পথে বীজেই স্থির,
ভাবসঙ্গত ডিম্বকোষে
গিয়েই দেহাধারে,
স্ত্রীদেহেতে তা’র ফলেতে
ক্রমবিকাশে বাড়ে। ৪।
রজ-বীজে যা’-কিছু সব
হ’লো রকমফের,
রং-বেরং এ ঢং-বেঢং এ
হরেক রকম জের। ৫।
নারী হ’তেই জন্মে জাতি
থাকলে জাত তবেই জাতি;
স্বামীতে যা’র যেমনি রতি
সন্তানও পায় তেমনি মতি। ৬।
নারী হ’তে জন্মে জাতি
বৃদ্ধি লভে সমষ্টিতে,
নারী আনে বৃদ্ধি-ধারা
নারী হ’তেই বাঁচাবাড়া,
পুরুষেতে টানটি যেমন
মূর্ত্তি পায় তা’ সন্ততিতে। ৭।
সদ্বংশজ নিম্নঘরের
শ্রেষ্ঠ মেয়ের সেবানতি,
টানবুভুক্ষায় চিন্তা-কর্ম্মে
আনলে স্বামীর উপরতি,
ডিম্বরেতে অচিন্-দাগে
সঙ্গতি হয় অনুরাগে,
দীপ্ত ঝাঁঝাঁল তত্তরে হয়
দীপন-স্বভাব সে-সন্ততি। ৮।
কাম-কামিনীর অনুরাগে
ডিম্বরেতের হয় মিলন,
ঐ টানেতেই জন্ম জীবের
বাঁচে চলে তা’র জীবন। ৯।
চিন্তায় কৰ্ম্মে সুসঙ্গতি
উঠলে ফুটে টানে,
জাতকেও পায় তাহাই
সুভাব ফোটে প্রাণে। ১০।
চিন্তা-কর্মে টানের চাপ
ডিম্বরেতেও তা’রই ছাপ। ১১।
বীজদেহেতে অচিন্ দাগ
আকাশ-পাতাল জনন ফাঁক। ১২।
চিন্তা-কর্ম-সংস্কারেতে
দাগ উপজয় ডিম্বরেতে,
তেমনতরই ধরে শরীর
মেয়ের কোঁখে পুত,
জীবন-চলনা ঠিক রাখিস্ তুই
পেতে সুষ্ঠু সুত। ১৩।
ঘুমিয়ে থাকা পবিত্রতা
অন্তরেরই কোলে,
পুত্ররূপে জন্ম নিয়ে
ওঠে প্রাণন-দোলে। ১৪।
বৈধানিক যে ব্যবস্থিতি
সংস্কৃতিরই পথে,
নিহিত রয় সংস্কারেতে
গুণ ফোটে সেই মতে। ১৫।
বৈধানিক যা’ ব্যবস্থিতি
গুণও ফোটে তেমনিতর,
বীজ-শরীরেও তেমনিভাবেই
সংস্থিতি পায় তেমনি দড়। ১৬।
মানুষ কেমন তাই নয় শুধু
তা’রই পরিমাপ,
জন্মে কেমন সুষ্ঠু তাতেই-
কেমন ছেলের বাপ। ১৭।
সত্তাজড়িত সিদ্ধি যেথা
চিন্তা-চলন সমস্রোতা,
জননেতেও অর্শে সে-গুণ
হয়তো তীক্ষ্ণ, নয়তো ভোঁতা। ১৮।
অনুরাগী আবেগ-টানে
পেতে গিয়ে স্বামীর প্রীতি,
পাওয়ার পথের বাধার তোড়ে
ঘটলে মনের কু-বিকৃতি,
যেমনভাবে যে-অঙ্গেতে
নারীর যেমন বিকার ফলে,
সন্তানেরও সে-অঙ্গটি
বিকৃতি পায় তেমনি হ’লে। ১৯।
স্বামীর প্রতি যেমনি টান
ছেলেও জীবন তেমনি পান। ২০।
অভ্যাস-ব্যবহার যেমনতর
সন্তানও পাবি তেমনতর। ২১।
যে ভাবেতে স্বামীকে স্ত্রী
করবে উদ্দীপিত,
সেই রকমই ছেলে পাবে
তেমনি সঞ্জীবিত। ২২।
শ্বশুর-শাশুড়ী দেওর-ননদ
জা-জাওয়ালী নিয়ে
পারিপার্শ্বিক মানুষ-গরু
সব সকলই দিয়ে,
অভ্যাস-ব্যবহার যেমন নারীর
এদের প্রতি প্রীতি,
তেমন রং-এ হবেই রঙ্গিল
সন্তান-প্রকৃতি। ২৩।
উচ্চ নারীর নিম্নে টান-
ডিম্বরেতে ছাপটি ম্লান;
অনুরাগের অসঙ্গতি-
নিম্ন রতির কুসন্ততি। ২৪।
রতিকালে উদ্দীপনী
শুভ সম্বেগ-প্লাবন ছাড়া,
নারীর মনের বিপাক
যেমন সন্তানও হয়
তেমনি ধারা। ২৫।
কামার্ত্তীদের প্রলোভনে
মস্গুল হ’য়ে মত্ততায়,
পিতৃপুরুষ সজাত জাত
ক্ষুইয়ে ফেলে অবহেলায়,
সর্ব্বনাশে গা ঢেলে দেয়
বংশ নিপাত করে,
এ-সব হ’তে বাঁচতে নারী
সজাগ থাকিস্ ওরে। ২৬।
প্রবৃত্তি সব নিজেই স্বাধীন
বাধ্যবাধক নয়কো যা’র,
স্বৈরিণী তো সেই নারী হয়
মূর্ত প্রতীক ধৃষ্টতার। ২৭।
প্রবৃত্তি সব বাধ্য স্ব-এর
শ্রেয়নিষ্ঠ মন-প্রাণ,
একমুখতায় উদাম চলে
সাধ্বী স্বাধীন লোকত্রাণ। ২৮।
সব প্রবৃত্তির সমাহারে
উদাম হ’য়ে শ্রেয়-সেবায়,
অচ্যুতিতে সাধ্বী যা’রা
বাধ্য প্রাণে ধায়ই ধায়। ২৯।
দ্বৈধী সেবায় মেয়েদের ধী
দ্বিধায় ফাটল ধরে,
প্রজননেও তাই নিয়ে সে
গর্ভেতে বীজ বরে। ৩০।
বাপ হ’তে পায় ধী-প্রকৃতি
মায়ে জোগায় ধাত,
বিসদৃশ মিলন হ’লে
জন্মে কুপোকাৎ। ৩১।
দ্বৈধী সেবাই ফাটল ধরায়
মেয়ের কোমল ধীয়ে,
বহু আচারে কী যে হবে
রুখবি কী দিয়ে? ৩২।
পুরুষ নষ্টে যায় না রে জাত
মেয়ে নষ্টে জাত কুপোকাৎ। ৩৩।
হীনত্বতে জন্ম যা’র
মিত্রদ্রোহী ভাব তা’র। ৩৪।
স্ত্রীর বিরাগ কমাতে গিয়ে
কামাসক্ত হবে না,
শিশু হলে খিন্ন হবে
তুমিও ভাল থাকবে না। ৩৫।
সমাজ
সমাজ
সব বৈশিষ্ট্যের স্বতঃ গতি
এক আদর্শে হ’লে,
পারস্পরিক সুহৃৎ চলায়
সমাজ তা’কেই বলে। ১।
সমাজই তো উপচে উঠে
রাষ্ট্রে দীপ্তি পায়,
বিধান-মাফিক সটান চলায়
বর্দ্ধনাতে ধায়। ২।
এক আদেশে চলে যা’রা
সমাজ গজায় জানিস্ তা’রা। ৩।
ফের্ ওরে ফের্ ইষ্টদেবের
স্বার্থলাভে জীবন ব’,
ধন্য হ’বি, মান্য পাবি,
অমর সুধায় অমর হ’। ৪।
পূর্ব্বমহান স্বীকার ক’রে
পিতৃকৃষ্টি পূরণ যা’তে,
উন্নতিতে ধরবি তাহা
বাড়বি তা’তে জাতির সাথে। ৫।
পূর্ব্বতনের সূত্র ছিঁড়ে
আসুক নাকো যেই মহান,
উন্মাদনা গেলেই নিভে
উদ্দীপনার তিরোধান। ৬।
এক মাটিতে বসত যা’দের
ধর্মগুরু যা’দের সৎ,
ধান্য-গোধূম খাদ্য যা’দের
রয় কি পৃথক তা’দের পথ? ৭।
একপ্রাণতার মমত্বেতে
পরস্পরের সমাবেশ,
নিনড়-অটুট হ’লেই জানিস্
একটি দানায় বাঁধবে দেশ। ৮।
ইষ্ট-রাজা-পারিপার্শ্বিক
পিতৃ-পরিবার,
এ চার ভাগে আহরণ তোর
করবি ব্যবহার;
এমনতর চলায় জানিস্
জীবন-যাপন ধন্য মানিস্
রক্ষাটি তোর চতুর্দিকেই
থাকবে হুঁশিয়ার। ৯।
সমাজে আন ইষ্টানুগ
একতন্ত্রী সংগঠন,
যৌন-সূত্রে অনুলোমে
শ্রদ্ধাভরে কর্ পালন। ১০।
বাড়তে গেলেই সংহতিতে
সহগামী বিশিষ্টদের
নিয়েই হবে বাড়তে কিন্তু,
নইলে বৃদ্ধি আপসোসের। ১১।
পড়শীরা তোর নিপাত যাবে
তুই বেঁচে সুখ খাবি বুঝি?
যা ছুটে যা, তা’দের বাঁচা-
তা’রাই যে তোর বাঁচার পুঁজি। ১২।
ঝমক নাচে তাল-বেতালে
লক্-লকানে ফণী-ধাওয়ায়,
সিংহরোলে কাঁপিয়ে তুলে
মরণতরণ বীরগাথায়,
আর্য্যসমাজ, ওঠ্ রে জেগে
বীর্য্যপ্রাণা দ্বিজের ঘর,
অযুত আলোয় বুক ভরে নে
দীপ্ত কর্ রে বিশ্বচর। ১৩।
ডঙ্কা বাজা ভেরীর রবে
তূর্য্যধ্বনি নাচন রোল,
চল্ ওরে চল্ আর্য্যগর্ব্বে
ইষ্টস্বার্থী ধ’রে বোল;
সমাহারে আন্ সবে আন্
বীরদাপটে বীর্য্যপ্রাণ,
সামের গানে মাতাল ভোলা
জাত-সমাজে করে ত্রাণ। ১৪।
যে-জাতিতে যতই বেশী
সাধ্বী ধীরা নারী,
জীবন্ত সে-জাতি ততই
বিশ্বতমোহারী। ১৫।
যে-জাতিতে বারাঙ্গনা
স্বৈরিণী নারী কম,
নিছক জানিস্ সেই জাতিটির
আছেই বুকের দম। ১৬।
বারাঙ্গনা সেই-
বহুপুরুষে আত্ম বিকিয়ে
বাঁচায় জীবন-খেই। ১৭।
জাত-সমাজ বা সম্প্রদায়ে
যেমন নারীই হোক,
বিহিতভাবে রকমফেরে
রাখিস ঘুরিয়ে রোখ্ ;
জাতি-কুল বা ধৰ্ম্মভ্রষ্ট
যতই নারী হবে,
ধ্ব’সে যাবেই জীবন জাতির
নিছক জানিস্ সবে;
তাইতে বলি শোন্ তোরা ও
আবছা-দৃষ্টি যা’রা,
রাখতে নারী সামাল হ’ রে
ঘুচিয়ে বেকুব ধারা। ১৮।
কুলে নারী ভ্রষ্টা হ’য়ে
কুলেই কাউকে করলে গ্রহণ,
প্রায়শ্চিত্তে শুধরে নিয়ে
তা’কে কিন্তু করিস্থ বহন;
বধূত্বেরই নীচের থাক্
ভ্রষ্টাই অববধূ হয়,
শ্রেষ্ঠজনায় করলে বরণ
অববধূত্বেও উপচয়;
দেবকার্য্যে, পিতৃকার্য্যে
জানিস্ এরা হয়ই ন্যূন,
তপের তাপে কালে-কালে
কমেও কিন্তু ও-টুক ঘুণ। ১৯।
বর্ণঘাতিনী হ’য়েও যদি
অনুতাপে দ’গ্ধে-পুড়ে
মর্মাহতা জীর্ণা নারী
অতীতস্মৃতির ব্যথায় ঘুরে,
বৃত্তিক্ষতে শিউরে উঠে
কুলেই ফিরে আসতে চায়,
তা’রেও কিন্তু গ্রহণ করতে
বিধানমত পারাই যায়;
যথাবিধি প্রায়শ্চিত্তে
শুদ্ধ হ’য়ে কৃচ্ছতপে,
থাকতে পারে সেই কুলেতে
রত হয়ে ধর্ম-জপে;
পিতৃকার্য্যে দেবকার্য্যে
সংযমে আর হবিষ্যতে,
পংক্তি-ভোজন রাঁধাবাড়ায়
থাকবে না সে বিধিমতে;
এ ছাড়া সব পারিবারিক
ভোজ্যান্নতা যাহা-কিছু,
সবই করতে পারে তা’রা
যদিও থাকে খানিক নীচু। ২০।
কুলে নারী দুষ্টা হ’লে
যোগ্যপুরুষ থাকলে কুলে,
অববধূ সংস্কারেতে
নেওয়াই ভাল তা’রে তুলে। ২১।
কুলে দুষ্টা হ’লেও নারী
কুলেই রাখা ভাল,
রাখলে কুলে জাত-খুইয়ে
করে না সমাজ কালো। ২২।
বর্ণঘাতিনী নয়কো এমন
কুলটা যদি কেউ
অনুতাপেতে দগ্ধ হ’য়ে
নিয়ে ব্যথার ঢেউ,
কুলেই যদি ফিরে আসে
আশ্রয়-প্রার্থী হ’য়ে
যথাবিধি প্রায়শ্চিত্তে
নিস্ তাহারে ব’য়ে;
পিতৃকার্য্যে দেবকার্য্যে
হবিষ্য আর সংযমেতে,
করবে না, পারবে না ছুঁতে
আছে কিন্তু বিধানেতে। ২৩।
কামার্ত্ত হ’য়ে পুরুষ যদি
লুব্ধ করে নারী,
সদ্য আয়ু হারাবে
সেই সমাজ-ধ্বংসকারী। ২৪।
সমাজে যদি না থাকে তোর
আবেগভরা উন্নতটান,
জনননীতি বিপথগামী
দীপ্তিহারা বধির প্রাণ,
পরের দেওয়ায় জীবন-ধারণ
শিল্প মূক ও মুহ্যমান,
নিঝুম-নিরেট অন্ধকারেই
সেই সমাজ কি পায় না স্থান? ২৫।
কুল-বৈশিষ্ট্যে সজাগ যত
কৌলিন্যও ঝাঁঝাঁল তত,
ওইটি যা’দের যতই ক্ষীণ
কুল-গরিমায় ততই হীন। ২৬।
ক্ষতিকে যদি করিস্ দয়া
বাড়বে অপলাপ,
তুইও যাবি সর্ব্বনাশে
সমাজে ঘিরবে পাপ। ২৭।
অন্য জাতি বর্ণ যা’রা
তা’দের সৎ-এ উন্নয়ন
উপেক্ষি’ চায় বাড়তে নিজে-
অদূরেই রয় তা’র নিধন। ২৮।
বিপ্র ক্ষত্র বৈশ্য শূদ্র
যে চাহুক সৎসংহতি,
সহবর্ণে নিতেই হবে
নইলে রুদ্ধ তা’র গতি। ২৯।
বিপ্র ক্ষত্র বৈশ্য শূদ্র
পরস্পরের অবজ্ঞায়,
বাড়তে গেলে সংহতিতে
বিপাক চলে বাঘের পায়। ৩০।
অন্যায় পথের অত্যাচারে
খতম করিস ত্বরিত পায়,
নইলে ওটা বিষিয়ে জানিস্
করবে নিকেশ সমাজটায়। ৩১।
মহৎ চলেন যা’ করে তাই
ভবিষ্যতে সাধারণ
সেই পথেতে চলতে থাকে-
বাড়ে সমাজ-নিয়ন্ত্রণ। ৩২।
এক আদর্শে অটুট থেকে
প্রতিপ্রত্যেকে যখন
পরস্পরের স্বার্থ-সেবী,-
সংগঠিত তখন। ৩৩।
রক্ত গোলাপ ফুট্ল বুকে
পদ্ম ফোটে লালে লাল,
জীবন-দোলা দিচ্ছে রে দোল
প্রেষ্ঠী মাতাল মিলন তাল;
বীণ-প্রণবী মূর্ছনাতে
উঠছে রে গীত পাগল-করা,
ছুটল্ রে ওই ফুট্ল ওরে
হ’ল সমাজ দীপন-ভরা। ৩৪।
কৃষি
কৃষি
কাজে খাটে যদি জন
তবেই তা’র উপার্জন। ১।
গায়ের রক্ত করে জল
খাটলে মেলে পয়সা ফল। ২।
যা’র পয়সায় জমি কেন না
সেই তো মালিক আর কেহ না। ৩।
পয়সা যা’র জমি তা’র
তা’রই ছুঁয়ে অধিকার। ৪।
জমিতে যা’র অধিকার
ফসলে ভাগ আছেই তা’র। ৫।
জমির মালিক পায় যা’ ফসল
কৃষক পায় তা’র চষবারই ফল। ৬।
কিষাণ পায় শ্রমের ভাগ
মালিক পাবে তা’রই আগ। ৭।
লাঙ্গল লাঙ্গ্লে মেহানত
কৃষক পায় তা’রই কিম্মৎ। ৮।
মালিকের কৃষি মালিকের খাজনা
দিতেই কৃপণ চৌর্য্য-মনা। ৯।
কৃষির খাজনা দিতে আপদ
গণেই চৌর্য্য-বিশারদ। ১০।
চোত-বোশাখের মাঝখানে কর
আশুব্রীহির বপন শেষ,
খরা-ঝরা হোক না যেমন
প্রায়ই ফসল পাবি বিশেষ। ১১।
ঝাড়ের তেজে বীজের গোঁ
ক্ষেত বুঝে তাই বীজটি রো। ১২।
উর্ব্বরা নয় ক্ষেতটি
যেথায় সুবীজও কি ফলবে সেথায়? ১৩।
যেমন বীজটি ফেলবে ক্ষেতে
পাবেও তাহা অংকুরেতে। ১৪।
ভালও যদি ফসল ক্ষেতের
হয় না তফাত বীজের জাতের। ১৫।
ক্ষেতের গুণে বীজের বাড়
যেমনি বীজ তেমনি ঝাড়। ১৬।
গজান গুণ থাকলে ক্ষেতের
হয় তা তফাৎ বীজের জাতের। ১৭।
খাই-দাই-চলা ধানের ক্ষেত
একখানা পাকা বাড়ী,
এইটুকুতে দিয়ে ভর
বর্দ্ধনে দে পাড়ি। ১৮।
জমি-জমা কৃষিভরা
ধান্য-গোধূমশালী,
প্রলয়েও সে নষ্ট না হয়
যাপে স্বজন পালি’। ১৯।
শিল্প
শিল্প
শ্রম করে আয় যে-জন
ধরে সম্পদ তা’রে সেবা করে। ১।
খেটে-খুটে দিলে আয়
তবেই মানুষ অর্থ পায়। ২।
বিনিময়ে আয়ের অর্থ
যা’ করবি তা’য় নিজের স্বত্ব। ৩।
আয় যা’ করিস্ তা’র বদলে
কিনলে জানিস্ নিজের বলে। ৪।
কাজ না ক’রে যে-জন পায়
সেই পাওয়াতেই তা’রে খায়। ৫।
আয়ে খাটিয়ে দেয় না
লক্ষ্মীরে সে পায় না। ৬।
খাটে-খোটে লোকসান
মন্দ বুদ্ধি নিছক জান। ৭।
দেয় না আয়, কেবল চায়,
শয়তানী তা’র পায়-পায়। ৮।
নাইকো কাজে, কেবল কথা-
সন্দেহের সে, অপহতা। ৯।
শিল্প যদি সেবায় ভুলে
না করে সেবায় আহরণ,
উন্নত চালে চলতে পারে
না পায় এমন সংরক্ষণ
লাগোয়াবুদ্ধি একটু ক’রেই
অমনি যদি হাঁপিয়ে যায়,
শিল্প সেথায় করবে কি রে?
অবশ মাথায় মুষড়ে যায়। ১০।
শিল্পী মাথা শিল্পঘরে
তবেই দেশে লক্ষ্মী ধরে। ১১।
ইষ্টানুগ সেবাবুদ্ধিই
শিল্প গড়তে পারে,
এই সেবাতে কী যে না হয়
তা’ কে বলতে পারে। ১২।
ব্যবসায়
ব্যবসায়
ব্যবসা চাকরী যে যা’ করুক
ইষ্টকৃষ্টি কুলমর্য্যাদা-
বলি দিয়ে বৃত্তিলোলুপ
হয় যে জানিস্ ইতরজাদা। ১।
খেটে-খুটে আয় যে করে
মা লক্ষ্মী তা’য় আগলে ধরে। ২।
লাভ দেখিয়ে করলে কাজ
অর্থ পরায় মাথায় তাজ। ৩।
সময়-মতন ভাল জিনিস্
অল্প দরে নিস্ রে কিনে,
প্রয়োজনটি দেখলে চড়া
সুবিধায় দিস্ বাজার চিনে। ৪।
ব্যবসায় প্রিয় চরিত্র কী
শুনবি কি রে তা’?
ঘোষণ-দক্ষ নিপুণ স্বভাব
সেবায় কুশলতা। ৫।
ব্যবসাই যদি করতে চাস্
ব্যবহার আগে শেখ,
মানুষে করিস্ স্বস্তিভরা
র’বে না দুঃখের রেখ। ৬।
মানুষ সম্পদ না করে তুই
টাকা-স্বার্থী হ’বি যত,
দুঃখ-অভাব-দুর্বিপাকে
ততই রে তুই থাকবি রত। ৭।
হাতে মজুত না থাকলে তুমি
বাঁধা-ওয়াদা করবে না,
ওয়াদা খেলাপ হ’লেই কিন্তু
প্রত্যয়ের মান থাকবে না। ৮।
কী করতে গিয়ে কা’র পর
কী লাগে তা’র হিসাব কর্,
এমনি করে কাজে নাম
তবেই হ’বি সফলকাম। ৯।
প্রয়োজনের সময়টিকে
ধরতেই যে পারবে না,
ব্যবসা করা চুলোয় যাবে
ব্যয়ে আয় তা’র টিকবে না। ১০।
মাথার ঘাম পায়ে ফেলে
লাভ দেখালে পয়সা মেলে। ১১।
খাবি কিন্তু লাভ দেখিয়ে
পাস যাঁ’ হ’তে তাঁ’কে দিয়ে। ১২।
আসল ভেঙ্গে যে-জন খায়
ব্যবসায় সে চুলোয় যায়। ১৩।
লাভের বেশী করলে খরচ
টিকতে জেনো পারবে না,
দেনায় ব্যবসা ডুবেই যাবে
নিজেরও কিছু রইবে না। ১৪।
কী তদ্বিরে কম খরচে
কত সুন্দর যোগান যায়,
এইটি জানিস্ ব্যবসাতী তুক
ব্যবহারে রাখিস্ তা’য়। ১৫।
লাগোয়া থেকে কর্ম্মেতে
তোর খোঁজটি নিয়েই চলিস্,
এমনি করে ভুয়োদর্শনে
আহরণ তুই করিস্;
এইভাবেতে ক্রমেই জানা
করতে থাকবি আয়,
ব্যবসা ধ’রে অমনি করে
উন্নয়নে ধায়। ১৬।
ক্রেতায় যখন প্রতুল করে
অভাবে সামাল পারবি দিতে,
প্রতুল করার এক কণাই
পারবে লাভে উপচে নিতে;
ওই দিকেতেই লক্ষ্য রেখে
ব্যবসা ধরিস, শ্রেষ্ঠী ছেলে,
বাণিজ্যেতে লক্ষ্মী-আবাস
দেখবে লোকে চক্ষু মেলে। ১৭।
লাভের আধা করবি খরচ
সেইটি জানিস্ সমীচীন,
এ না করে ধরলে ব্যবসা
দিনে-দিনে হ’বিই ক্ষীণ। ১৮।
লাভের অর্দ্ধেক ব্যবসা থেকে
দরকার হ’লে নিতে পারিস্,
এরও বেশী প্রয়োজনে
ঋণ না করে খেটে তুলিস্। ১৯।
কর্জ দিয়ে উপকার
সুদের লোভে চুরমার। ২০।
সুদের লোভে কর্জ দ্যায়
লোভই তা’রে ঠেঙ্গিয়ে খায়। ২১।
ধার যদি দিস্ এমন দিবি
লাগবে না গায়ে কোনদিন,
ব্যবসা-পথে চললে এমন হ
‘বিই নাকো শক্তিহীন। ২২।
ধার নিয়ে যদি তোর কাছে কেউ
ব্যবসা করে নষ্ট পায়,
লেগে-বেঁধে দেখবি রে তুই
পারিস্ যদি বাঁচাস্ তা’য়;
এর ফলে তুই দেখবি ধীরে-
প’ড়ে-যাওয়া নষ্টটিরে
লাভে-আসলে পাবি ফিরে
পালবে তোরে উচ্ছলায়। ২৩।
লোকে যাতে তৃপ্ত হয়
নজর তা’তে দিয়েই রাখিস্,
প্রয়োজনের এমনি সেবায়
বাণিজ্যেতে পাবি বক্শিস ! ২৪।
বৈদ্য-ডাক্তার-হাকিম-উকীল
এমনি ব্যবসাত যা’রা
প্রার্থীর কাছে চাইবে কেমন
শোন্ রে আমার ধারা,-
প্রার্থীর কাছে বলবে, যদি
সাধ্য থাকে ন্যায্য দে,
সাধ্যে যদি নাই কুলায় তোর
এই দিয়েই তুই নে
তাও যদি তুই নাই রে পারিস্
চাইনে কিছু তোদের কাছে,
বঞ্চনা যদি করিস্ আমায়
বুঝিস্ কিন্তু কুফল আছে। ২৫।
যে-ব্যবসাই করিস্ না তুই
যা’ই করে না পালিস্ জীবন,
মিত্রদ্রোহী অকৃতজ্ঞ
বিশ্বাসঘাতক হ’লেই পতন। ২৬।
যা’-কিছুই না করিস্ রে তুই
যদি বা তা’ কোন-কিছুর
সার্থকতায় ধন্য না হয়-
ব্যর্থ তাহা বধির নিঠুর;
ব্যবসা লাগি’ ব্যবসা-বুদ্ধি
জানিস্ যখন হয় উদয়,
সহজ ধারণ হয় নারে তা’র
সমাধি তা’য় কভু না হয়। ২৭।
উদ্বেগ যা’তে রয়-
সেই উদ্বেগ যে নিরসনে
স্বজন সেই তো হয়। ২৮।
দেবার ডাকে ডাকছে তোরে
উৎসর্গ-আমন্ত্রণে,
কে যাবি রে আয় ছুটে আয়
এমন শুভক্ষণে। ২৯।
শ্রমিক সফল প্রস্তুতিতে
ধনিক জোগায় মাল,
সেই শ্রমিকই ধনিক হ’য়ে
শ্রমিককে দেয় তাল। ৩০।
শ্রমিক আনে প্রস্তুতিতে
প্রয়োজন পূরে তা’য়,
সেই পূরণই অর্ঘ্য আনে
পূরণী কায়দায়;
শ্রমিক পায় তা’র প্রস্তুতি-ফল
ধনী পায় ফসল,
ধনিক-শ্রমিক সুমিলনে
শ্রেয় হয় উছল। ৩১।
বলদ যদি লাঙ্গল টেনে
শ্রমিক সে সাজে,
বলদই তো পায় সে-ফসল
কৃষক তো বাজে। ৩২।
কৃষক পালে বলীবর্দ্দে
পোষণ দিয়ে তা’র,
তা’রই শ্রমের ফসলে তাই
চাষীর অধিকার। ৩৩।
প্রস্তুতিরই পূরণ-কায়দা
ধনের আগমনী,
সেই ধন দিয়ে শ্রমিক-সেবাই
লক্ষ্মীদেবীর খনি। ৩৪।
দারিদ্র্য
দারিদ্র্য
আলস্য আর অবিশ্বাস
আত্মশ্লাঘা কৃতঘ্নতা,
দারিদ্র্যকে খুঁজছো কোথায়?
এদের কাছে দরিদ্রতা। ১।
পাওয়ার কাজে নাইকো নেশা
অভাববোধে হা-হুতাশ,
দৈন্য-কথা কয় কেবলই
দুৰ্দ্দশাতেই তা’র নিকাশ। ২।
আগম নাইকো ঘরে-
খরচের বহর বাড়ালি কেবল
মরবি না কি করে? ৩।
দরিদ্রতার শ্রেষ্ঠ বর
নেওয়ায় গরজ, দেওয়ায় ডর। ৪।
উপায় করে দেয় না, খায়-
পাওয়া যায়, থোওয়াও যায়। ৫।
পয়সার দিকে ঝোঁকটি গেলে
কাজের নেশা ছুটবে,
কাজের নেশা টুটলে জানিস
দরিদ্রতা জুটবে। ৬।
কোন-কিছু করতে যেতেই
মনের মাঝে যা’র
দিন-গুজরান পেটের চিন্তা
করেই অধিকার,
বেকুব ধান্দায় নিঝুম ক’রে
ঝোঁকটি খেয়ে ফেলে,
দারিদ্র্য-ব্যাধি নিছক সেথা
আছেই চক্ষু মেলে। ৭।
খেতে চায় যে পরের উপর
সেবার ধান্দা নাই,
ক্ষুধাই তা’কে ফেলবে খেয়ে
এড়াতে বালাই। ৮।
দারিদ্র্য-ব্যাধি ধরে যত
করার দফা নিকেশ তত। ৯।
পিছন দিকে সম্বেগ যা’র
করতে যেতেই ধায়,
লক্ষণ সেই দারিদ্র্য-ব্যাধির
দারিদ্র্যে তা’য় পায়। ১০।
ধীটি যখন কুয়াশাভরা
বুঝলেও কাজে ফুটল না,
না করে পাওয়ার বুদ্ধি শুধুই
বেকারের ওই লক্ষণা। ১১।
অভাব যখন মারবে ছোঁ
যা’ জোটে দিস্ পাবিই জো। ১২।
পালকের স্বার্থ দেখিস্ আগে
নিজের স্বার্থ পরে,
এমন স্বভাব থাকলে বজায়
র’বেই অন্ন ঘরে। ১৩।
সঙ্গতিহীন কর্জে দান
আহাম্মকী অভিমান। ১৪।
কেমন ক’রে কী করলে বা
কী হবে পাওয়ার,
বুঝে করিস্ নইলে বেকুব
ঘুচবে কি বেকার? ১৫।
তোর থাকেই যদি ঘরে-
সাধ্যমত ফিরাস্ নাকো
চাইলে তোরে ধ’রে। ১৬।
খেয়েই যদি বাঁচতে চাও
তবে আহরণ কর,
অভাব পূরে’ পরিস্থিতির
নিজের পূরণ ধর। ১৭।
নিজে ইষ্টে অটুট থেকে
সবায় করিস্ তুষ্ট,
অভাবেতে আগলে ধ’রে
পারলে করিস্ পুষ্ট;
এই নিয়মে চলিস্ যদি
ক্রমেই দেখতে পাবি তুই,
দারিদ্র্য তোর হাঁটু গেড়ে
মাথা নুয়ে ছুঁচ্ছে ভুঁই। ১৮।
ব্যবহার
ব্যবহার
নিতে চায় দেয় না
তা’র হাভাত যায় না। ১।
দিতে যে পারে না
পাওয়া তা’র ঘটে না। ২।
যতর স্বার্থে স্বার্থবান্
ততই বড় তাহার মান। ৩।
বাঁচ তুমি দানে যা’দের
আগেই মোছ অভাব তা’দের। ৪।
বলার ভিতর ভাল যা’ তা’য়
ফলিয়ে তুলিস্ বাস্তবতায়। ৫।
বাঘ-নখেতে ধরবি তা’ই
বিবেক-বলে করবি যা’ই। ৬।
ঘৃণা, লজ্জা, মান, অভিমান
ভয়-আদিরে বিদায় দিয়ে,
প্রেষ্ঠস্বার্থে ওঠ রে ফুটে
প্রাণনধারায় উচ্ছলিয়ে। ৭।
পারিপার্শ্বিক হৃদয়গুলি
প্রেষ্ঠে বেঁধে তোল্
উপভোগে অঢেল হ’বি
নিত্য নবীনভোল। ৮।
নিজেই বুঝে হ’তে রে পাকা
ধাক্কা খেতে হবেই অনেক,
বহুদর্শীর হাত ধ’রে তাই
দূর করিস্ তোর শঙ্কা যতেক। ৯।
সব কথারই বাঁক যদি রয়
আবেদনী ঠারে,
সেইতো ভাল ঘাত লাগে না
কা’রও অহঙ্কারে। ১০।
চাকর-বাকর-মজুর প্রতি
মেজাজ-চলন যেমনই,
স্বভাবতঃ জানিস্ লোকের
প্রকৃতি প্রায় তেমনই। ১১।
অনুরোধী আবেদনে
আদেশ দিতে হয়,
এই স্বভাবের এস্তামালে
গায় লোকে তা’র জয়। ১২।
স্বার্থক্ষুধ অবহেলা
অকৃতজ্ঞ ব্যবহার,
প্রিয়জনার হৃদয়খানি
বিষিয়ে আনে হাহাকার। ১৩।
আবেগভরা গুণগ্রাহিতার
তৃপ্ত দীপনসুর,
মন-মানুষের আকর্ষণে
করেই ভরপুর। ১৪।
বাঁচাবাড়ার বিরোধ-নীতি
উগ্রমুখী দেখতে পেলে,
দাপট-বাধায় রুখিস্ ধীমান
প্রজ্ঞা, শৌর্য্য, দীপ্তি জ্বেলে। ১৫।
কাউকে দুষে কসনে কথা
ইষ্টে দ্বেষ না হ’লে,
দুষলেও এমন বলিস্ নাকো
বর্দ্ধনা যায় দ’লে। ১৬।
উপকারের আশায় যদি
দেয় কিছু কেউ তোরে,
নিলেই তাহা করবি তাহার
সৎদীপনায় ভ’রে। ১৭।
বলবে ব’লে ভাবছ যাহা
ত্বরিত ভেবে ফলাফল,
সুফল পেতে সুকৌশলে,
বলতে পেলেই পাবি বল। ১৮।
ইষ্টানুগ সংহতিকে
বজায় রেখে সর্ব্বথা,
সব ব্যাপারেই সকল কাজে
হিসাব ক’রে কস্ কথা। ১৯।
একটু ক’রে ধীর-চলনে হ
য় না অভ্যাস এস্তামাল,
অমনতর চললে বাড়েই
ব্যর্থ-বেফাঁস কুজঞ্জাল;
যা’ করবি তুই, বুঝলে মনে
এক ঝাঁকিতে কর্ তাহা
সমানে চল্ সেই চলনে
এমন চলাই ঠিক রাহা। ২০।
বৈদ্যে রুষ্ট করেই যা’রা
বাক্যে আর ব্যবহারে,
ব্যাধির বালাই বয়ই তা’রা
কষ্ট দিয়ে রোগী মারে। ২১।
শিষ্টাচারে শঠ-প্রতারক
না-ই যদি হয় জয়,
তুল্য ভয়াল সংঘাতে কর্
শাঠ্যবুদ্ধি ক্ষয়। ২২।
যেমন আসুক বাধা মন্দ-
প্রত্যুৎপন্নবুদ্ধি দিয়ে,
দূরদৃষ্টির নিয়ন্ত্রণে
নিবিই শুভে মোচড় দিয়ে। ২৩।
আগের বলা-করার সাথে
পিছের যদি বেমিল হয়,
সামঞ্জস্য-সার্থকতায়
এনেই করবি শুভময়। ২৪।
শত্রু কেউ তোর হ’তে পারে
দেখলে মনে জানি,
আগেই মিত্র করবি তা’রে
সেবা-সম্বেদ দানি’। ২৫।
ইষ্টস্বার্থপ্রতিষ্ঠা তোর
বাঁচাবাড়ার সূত্র ধরি,’
সব ব্যাপারে এই চলনে
সার্থকতায় উঠবে ভরি’। ২৬।
বিশেষ-কিছু করতে গেলেই
জিজ্ঞাসি’ নিস পাঁচজনে,
উপায়টিও নিস্ শুনে তুই
উদ্দেশ্যটি সম্পূরণে;
আত্মম্ভরীর বিরাগ হ’তে
রেহাই পাবি নিছক ওতে,
সমর্থনে থাকবে মানুষ
রাখি্স এটা ঠিক মনে। ২৭।
যে-কাজে যা’য় ভার দিবি তুই
স্বাধীনভাবে বাড়তে দিস্,
করার পথে বেচাল শুধু
কড়া নজরে তাড়িয়ে দিস্। ২৮।
উপকারে উছল হ’য়ে
আত্মপ্রসাদ-মনে,
দেয় যদি কেউ নিস্ তাহা তুই
বিনীত সম্ভাষণে। ২৯।
অত্যাচারের সায় দিতে কেউ
মিনতি করে যদি,
লুব্ধ ক’রে চাহেই দিতে
রুধিস্ তাহার গতি। ৩০।
দুই পক্ষকেই বুঝে-সুঝে
করিস্ মতের নির্ণয়ন,
মন-গড়া একপেশে বুঝে
ঘটায় কিন্তু অঘটন। ৩১।
বৃত্তিতাড়ায় আগল-পাগল
স্বভাব যা’দের সাম্য-ভাঙ্গা,
সহিস্-বহিস্ নিয়ন্ত্রণে
উৎচেতনে রাখিস্ চাঙ্গা;
এই চলনে স্বভাব রেখে
সব সময়ই চলিস্ যদি
বিরাগভাজন কমই হ’বি
থাকবি শ্রেয়ে নিরবধি। ৩২।
যেমন প্রাণে যা’ দিবি তুই
তেমনি দেবার অনুসৃতি
হবে লোকের জানিস্ খাঁটি,-
দুনিয়ারই এই প্রকৃতি। ৩৩।
বাদ-প্রতিবাদ স্বার্থবিবাদ ঘ
টেই যদি জীবনটাতে,
যত পারিস্ ত্বরিত-ঝটিত
চেষ্টা করিস্ তা’ মেটাতে;
তা’তেও যদি নাই মেটে গোল
ন্যায় ও প্রমাণ দৃঢ় থাকে,
বিরোধ ছেড়ে ন্যায়-বিচারে
মিটাস্ গিয়ে শত্রুতাকে। ৩৪।
মন্দরে তুই নিরোধ করিস্
সম্ভব যদি হয়,-
প্রতিক্রিয়ায় মন্দই আসে
নিরাকরণে জয়। ৩৫।
পরের কুশল দক্ষতাকে
ক’রে যা’রা খর্ব্ব,
খাটে আত্ম-প্রতিষ্ঠাতে-
কুহকে খায় সর্ব্ব। ৩৬।
যতই ভাববে তোমারে কেউ
বোঝে না বা খতায় না,
বুঝবে তোমার চিন্তা-চলন
তা’দের কিছুই জোগায় না। ৩৭।
সাক্ষী-প্রমাণ মিলবে যাহা
মেনে নিয়ে তাই
দেখবি তাহার কোনটা কিতক
সমীচীনে নাই;
উচিত যা’ তার ভুল প্রমাদে
কিংবা বিক্ষেপতায়
ছিন্ন হ’লেও নিবি তাহা
এলে সার্থকতায়,
বিরুদ্ধ যা’ তাৎপর্য্যে তা’র
অর্থ-বাস্তবতায়,
মিল না হ’লে দেখবি ভেবে
কী পর্যায়ে ধায়;
সামঞ্জস্যে এনে এ-সব
যথার্থতার ছবি
কল্পনাতে দেখলে এঁকে
প্রায় নিশ্চয় হ’বি। ৩৮।
শ্রেষ্ঠ কিংবা শ্রেষ্ঠ বর্ণের
প্রণাম নিতে নেই,
এটি হ’ল নিছক জানিস্
অধঃপাতের খেই। ৩৯।
উভয়পক্ষ জেনে-শুনে
সৃষ্টি করে মতবাদ,
চলায়-বলায় করবি তেমন
নইলে ঘটে ঘোর প্রমাদ। ৪০।
নেবার বেলায় আত্মীয়তা
দেবার বেলায় নয়কো কেউ,
চাটুর মত ফেরেই তা’রা
বাঘের সঙ্গে যেমনি ফেউ। ৪১।
কটু কথা এলেও মনে
কিংবা মন্তব্য,
বলিস্ না তা’, বলতে হ’লেও
বলবি সুভব্য। ৪২।
আপন-করা আপ্যায়িতে
সুষ্ঠু-চতুর ব্যবহারে,
শত্রুকেও করলে সেবা চ
লবে জীবন দীপ্তি-ভারে। ৪৩।
দুষ্ট হ’লেও নিম্নে সে-দোষ
ইষ্টস্বার্থে যদিই চলে,
বিনাশ আনে মিথ্যা যা’ তা’
রুখবি পারিস্ যে-কৌশলে। ৪৪।
তা’র অবস্থায় পড়লে তুমি
কী কর না জেনে,
দোষ দিও না কা’রও তুমি
নিও না তা’ মেনে। ৪৫।
যে-কথাটি আসছে মনে
ত্বরিত ভেবে পূর্ব্বাপর,
বললে তাহা সুকৌশলে
চলায় হ’বি সুতৎপর। ৪৬।
বঞ্চনারই কুটিল প্রেমে
চাস্ যদি তুই অব্যাহতি
যা’কে দিয়ে পুষ্টি রে তোর
পুষ্টিতে তা’র রাখ মতি। ৪৭।
বকা যদি না-ই দিস্
নকল সাধু সাজিস্ না,
সাধু সেজে গুরু হ’য়ে
মানুষ নিকেশ করিস্ না। ৪৮।
না লুকিয়ে যেখানে যা’
ভালয় খাটে জানিস্,
তেমনি করে বিবেচনায়
সেখানে তাই বলিস্,
এমনিতর চলন নিয়ে
যতই চলতে পারবি,
নিরুদ্ধ তোর মনটি খুলে
ঋজুই হ’তে থাকবি। ৪৯।
কাউকে যদি বলিস্ কিছু
সংশোধনের তরে,
গোপনে তা’ বুঝিয়ে বলিস্
সমবেদনা-ভরে। ৫০।
ঋণ কা’রও তুই ক’রে থাকলে
রাখিস্ মনে এই চলাটি,
চাওয়ার আগেই নজর রেখে
ফিরিয়ে তা’রে দিবিই খাঁটি। ৫১।
কুৎসা-কুজ্ঝটিকায় কি হয়
জ্ঞানের আলো বিচ্ছুরিত?
তাচ্ছিল্যেরই ফক্কা মেরে
কুৎসা করিস্ বিদূরিত। ৫২।
ষড়যন্ত্র হ’চ্ছে বুঝে
তোর বিরুদ্ধে হ’য়ে রুষ্ট
ভেবে দেখবি তা’র মূলে কে?
তা’কেই গিয়ে করবি তুষ্ট। ৫৩।
এমনভাবে ঋণ দিস্ তুই
যেন সইতে পারিস্,
না পেলেও তোর হয় না ক্ষতি
তা’কেও তুলে ধরিস্। ৫৪।
বাধাই যদি হ’স্ রে তুই
খারাপ কিছু অন্যায়ের,
এমন ক’রেই বাগিয়ে নিস্ তা’
পথ না থাকে তোর ক্ষয়ের। ৫৫।
কা’রও কিছু অনিচ্ছায় তা’র
করতে অধিকার
সখের উপর জুলুম ক’রে
করিনে আব্দার;
জবরদস্তির ফলেতে তুই
দুঃখ পেয়েই যাবি,
বেকুব চলায় সমবেদনার
কা’রেও কি তুই পাবি? ৫৬।
ওরে ঋণী, আয় রে কাছে
আমার কথা শোন,
ধার করলেই শোধ দিও তা’
কমিয়ে প্রয়োজন। ৫৭।
উপকারী ভুল ক’রেও তোর
করলে অপকার,
তোর যা’ কথা বলিস্ তা’রে
কু করিস্ না তা’র। ৫৮।
লোকে যা’রে শ্রেষ্ঠ মানে
তা’রেও কিন্তু তুই মানিস্,
যা’তে শ্রেষ্ঠ সে হয়েছে
সেবায় তাহার সেইটে নিস্। ৫৯।
তোমার করার অনুকম্পায়
কেউ যদি না দিত,
চালবাজি আর বাহাদুরী
কোথায় তোমার রইত? ৬০।
যে তোরে রে দিয়েই বাঁচায়
নিজের করার ফলটি রেখে,
না দিয়ে তাঁ’য় খাস্’নে কিন্তু
দিস্ তাঁ’রে নিজ খাবার থেকে। ৬১।
আয় বুঝে ব্যয় না করে তুই
ব্যয়ের বহর বাড়িয়ে নিলি,
সংস্থিতিকে কুড়ুল মেরে
বৃদ্ধিরে তোর চুলোয় দিলি। ৬২।
জীবিকা-নির্ব্বাহভার
করিয়া গ্রহণ,
পোষণ-পালনে পুষ্টি
দেন যেই জন;
তাঁ’কে সেবি’ বিনিময়ে
করিলে গ্রহণ;
দক্ষতা লাঞ্ছিত হয়
নিশ্চয় বচন। ৬৩।
ছোট্ট যা’রা স্নেহভরে
আপ্যায়িতে আপন রাখিস্,
উন্নয়নী ব্যবহারে
যত পারিস্ তাদের বহিস্। ৬৪।
ইষ্টভ্রাতা খারাপ হ’লেও
নজর রাখিস্, দেখিস্ তা’য়,
অন্যে যেন দলতে নারে
ক্রূর-কুটিল ধৃষ্টতায়। ৬৫।
লোক-সমক্ষে বললে যাহা
সবাই পায় সুফল,
বুক ফুলিয়ে এমন কথা
যতই পারিস্ বল। ৬৬।
বিশ্বাসঘাতক কৃতঘ্নতার
দেখলে ঘৃণ্য চাল,
বলবি সবায় জ্বলনদ্রোহে
রুখবি হামেহাল। ৬৭।
তুই না হ’লে চলে না কা’রও
বাগে ফেলে জানিয়ে দেওয়া,
হামেহালই এ কসরতে
তিক্তে জীবন, ব্যর্থ পাওয়া। ৬৮।
মানুষের মন-বৃত্তিভূমে
কোন্ কথাটি কেমন গড়ায়,
সেই দিকে তুই নজর রেখে
কহিস্ কথা সেই দাঁড়ায়। ৬৯।
গুরুর প্রতি টান কমে যায়
এমন সঙ্গে হুঁশিয়ার,
সর্ব্বহারা ঘিরবে নইলে
ক্ষয়ে নিকেশ দুর্নিবার। ৭০।
আপন-করা সমবেদনার
সুরটি ফুটে উঠলে,
সেই সুরেতে শাসন করিস্,
শান্তি হবে-বুঝলে? ৭১।
আপদ-বিপদ হ’লে কারও
করছে মানুষ দেখলে ঢের,
ভিড় করিনে, লক্ষ্য রাখিস্
তামিল কর্ প্রয়োজনের;
সবাই মিলে হট্টগোলে
করার বেগে ধাস্ যদি,
করা হবে না, পণ্ড হবে,
নষ্ট হবে তা’র গতি। ৭২।
পূরণ-প্রবণ বর্তমানে
করলি বাতিল হেলার সুরে,
পূর্ব্বঋষির সব-কিছু যা’
দিলিই ফেলে আস্তাকুঁড়ে;
পূরণ-প্রবণ বর্তমানে
পূর্ব্বতনে যদি দেখিস্,
পূর্ব্বতনে আগে ক’রে
বর্তমানই পাবি জানিস্। ৭৩।
পূর্ব্বমহান বাতিল করে
বাহাদুরী করতে বাহাল,
যতই বড় হোক না রে সে
ধরিস্ নাকো তা’র নাগাল। ৭৪।
ঋণের তাগিদ এলে পরে
ফিরাসনে নে তা’য় খালি হাতে,
যেমন থাকিস্, পারিস্ যদি
করেই দেখ্ না কী হয় তা’তে। ৭৫।
গোপন কথায় যাসনে কোথাও
না ডাকলে কেউ অনাহুত,
লুকিয়ে শুনলে গোপন কথা
মিথ্যা যে পাপ হয় অযুত। ৭৬।
কা’রও যা’তে ক্ষতি না হয়
এমনি ক’রে সব জনায়
বাড়িয়ে দিয়ে তুলবি পদে,-
পদ দিলে তা’ পাওয়াই যায়। ৭৭।
কা’রও কোন ন্যায্য মতে
দিস্ না কোন বাধা,
অমিল হ’লেও বুঝিয়ে বলিস্
যে-বোধটি তোর সাধা। ৭৮।
ওরে বেকুব নিন্দা ক’রে
হ’তে চাসনে বড়,
নিন্দুকের তুই সেরাই হ’বি
এই কথাটিই দড়। ৭৯।
ব্যথার কথা বললে রে কেউ
শুনিস্ আগ্রহ নিয়ে,
যেটুকু পারিস্ মুক্ত করিস্
সার্থক-সেবা দিয়ে। ৮০।
তোমার ভাল যেমনি দাঁড়ায়
পড়শীদের উপর, ফিরা
তা’দের ভালও অনেকাংশে
তোমার করার ‘পর। ৮১।
কেউ না কেউ দেয় ব’লেই তোর
জীবন-চলনা সম্ভব হয়,
না পেলেও কি পারতিস্ বাঁচতে?
কোথায় যেতিস্ হ’য়ে ক্ষয়। ৮২।
ধর্মপথে ন্যায়পরতায়
সাম্য দোলে হাসিমুখে,
সাম্যে থাকা হরেক রকম-
ভাঙ্গলে জীবন যায়ই দুখে। ৮৩।
কথা কইবে গুড়ের মত
লেপ্টে র’বে গায়,
মিষ্টি কথাও শক্ত হ’লে
উল্টো পানেই ধায়। ৮৪।
কাউকে আপন করতে হ’লেই
আপন-আপন ভাববি তা’য়,
সপক্ষে তা’র করবি-কইবি
দেখবি দোষ তা’র উপেক্ষায়। ৮৫।
ব্যক্ত করো বাঞ্ছিত যা’
বাক্যে এঁকে ভঙ্গীভরে,
স্নেহল-দৃষ্টি গুণগ্রাহিতায়-
তা’তেই লোকের হৃদয় হরে। ৮৬।
প্রীতিপূর্ণ মেলামেশা
দীপন-মধুর বাণী,
শ্রদ্ধোদ্দীপী অনুচর্য্যা
হৃষ্ট করে প্রাণী। ৮৭।
কথা কইবি এমনভাবে
উত্তর পাবি ঈপ্সিত,
দক্ষবাচী এমন হ’লেই
কৃতার্থে তুই উন্নীত। ৮৮।
প্রেষ্ঠ-স্বার্থ কোন্ কথাতে
কেমন চলন-ব্যবহারে,
নজর রাখলে এমন চলায়
শ্রেয়ই কিন্তু পায় তা’রে। ৮৯।
চাহিদা-মাফিক ব্যবহারটি চ
লা-বলা তেমনিতর,
হাওয়ার তালে পা-টি ফেলে
চলাই হচ্ছে বুদ্ধি দড়। ৯০।
বয়স বেশী দেখবি যেথায় দিবিই
সেথায় যোগ্য মান,
সম্বন্ধ আর বর্ণ-শ্রেষ্ঠে
করবি যোগ্য শ্রদ্ধা দান। ৯১।
সৎ যা’ তা’কে করতে কায়েম
করিস্-কহিস্ যা’,
সবই হবে ধৰ্ম্মপ্রদ
খাঁটি জানিস্ তা’। ৯২।
জলদ-তালে কইবে কথা
বুঝ-দীপনায় সমঝাভাবে,
কইবে যা’ তা’ স্বল্পক্ষণে-
এমনি কওয়ায় তৃপ্তি পাবে। ৯৩।
তোড়ের রোখে এক ঝাঁকিতে
উদ্বোধনায় উন্নতি
চারিয়ে যদি নাই দিলি তোর
প্রত্যয়ের কী হিম্মতী? ৯৪।
খুঁচিয়ে কিংবা উপেক্ষাতে
শত্রুতাকে বাড়িও না,
মুগ্ধ রেখো তোমার পানে
দিয়ে শুভ-বর্দ্ধনা। ৯৫।
যে-চাহিদায় যেই না আসুক
বুঝলে সমীচীন,
ফুল্লদানে করবি তা’রে
তৃপ্তি-সমাসীন। ৯৬।
যেথায় দেখবি দ্বন্দ্ব নেহাৎ
এটা ঠিক কি ওটা ঠিক,
সামঞ্জস্য হয় যাহাতে
বিনিয়ে ধরবি তেমনি দিক। ৯৭।
গুণগরিমায় আঘাত দিয়ে
ক’স্ নে কথা সম্ভবমত,
অনুরোধী আবেদনের সুরে
কথা কস্ নিয়ত। ৯৮।
নিন্দা কা’রও শুনলেই তা’
ভাবিস্ নাকো নেহাৎ ঠিক,
ভজালে বা খতালেই তা’
বাস্তবে প্রায় হয় অলীক। ৯৯।
ভুল কিংবা আক্রোশে কেউ
করলে দোষারোপ,
তড়িঘড়ি বুঝ-প্রমাণে
করবি তা’র বিলোপ। ১০০।
মিত্রকেই যে শত্রু করে
উপকারীর অপকার,
বিশ্বাসঘাতক হয়ই সে
নরক তাহার দুর্নিবার। ১০১।
মিষ্টি-সরস ভরসা-ঘেরা
সেই কথনই জানিস সেরা। ১০২।
ভালই যদি বাসবি কা’রও
শোন্ কী কইতে চাই,-
ভাবিস্-বলিস্-বাসিস্ ভাল
কাজেও করিস্ তাই। ১০৩।
কাম-কুহেলে পড়িস্ যখন
আমার কথা শোন্
মাতৃচিন্তা-বিভোর হ’য়ে
সৎকাজে দিস্ মন। ১০৪।
দোষ দিয়ে দোষ করবি ক্ষালন
এমনি বেকুব তুই?
দোষ দিয়ে দোষ মাজলে পরে
দোষ বাড়ে শুধুই। ১০৫।
দোষেরে তুই করবি ঘৃণা
দোষীরে কিন্তু নয়,
এই কথাটি রাখিস্ মনে
হ’বি রে নির্ভয়। ১০৬।
নেবার বেলা আপন বল
দেবার বেলা পর,
এ স্বভাবটি থাকলে পাবে
অপঘাতের বর। ১০৭।
যা’র কাছে তুই পেলি, পাগল !
তা’রেই আগে পূরণ কর,
তাই যদি রে করতে পারিস্
তবেই সত্যি স্বার্থপর। ১০৮।
তোমার অভাবে দিচ্ছে যা’রা
তা’দের কেন দিচ্ছ না,
এমনি যদি চলতে থাক মু
ক্ত-বিপাক হ’চ্ছ না। ১০৯।
আলস্য আর দোষদৃষ্টি
থাকে যদি তোর,
দুঃখ-আঘাত-অবসাদে
হ’বি রে বিভোর। ১১০।
নটের মতো চল্ ওরে তুই
ভবরঙ্গ-মঞ্চমাঝে,
ইষ্টস্বার্থ রাখতে অটুট
কর্ অভিনয় তেমনি ধাঁজে। ১১১।
অন্যায়ী যে অত্যাচারী
ব্যাঘাত আনে উন্নতিতে,
রুদ্ধ করিস্ শক্তি দিয়ে
বুদ্ধি-বিচার-সৎবিধিতে;
ণ-স্বরূপা ব’লেই জানিস
নিজ প্রসূতি জননীরে,
বর্দ্ধনে তাই থাকিস্
সজাগ বাঁচাবাড়ার নীতি ঘিরে;
রঙ্গিল থাকিস্ ইষ্টপ্রাণে
স্বার্থে তাঁহার প্রতিষ্ঠাতে,
ণত্ব-জ্ঞানের হবেই উদয়
ঝলসে যাবে জগৎ তা’তে। ১১২।
বৃত্তিধৰ্ম্ম
বৃত্তিধৰ্ম্ম
ভাবে ঝোলে করে না
বাঁধন তা’র কাটে না। ১।
আলিস্যি যা’র করতে ভাল
তা’র দুনিয়ায় সবই কালো। ২।
কর্মহীন চিন্তা যা’র
শান-বাঁধানো নরক তা’র। ৩।
অশুভে যে দেয় লাই
ক্ষয় ছাড়া জয় নাই। ৪।
যোগ্যতা নাই স্পর্দ্ধা ধরে
ছোট্ট যা’রা দাবীই করে। ৫।
কহত-আশায় করা ছাড়ে
তা’রে কি কেউ রাখতে পারে? ৬।
ক্ষণভঙ্গুর মান যা’র
চিররুগ্ন যশ তা’র। ৭।
যোগ্যতা নাই দাবী করে
বেঘোর পথে তা’রাই মরে। ৮।
বিশ্বাসঘাতক কৃতঘ্নকে
ঝেটিয়ে তাড়াও এক ধমকে। ৯।
কৃতঘ্নে আশ্রয় দেয় অথবা প্রশ্রয়
পরিবার-পরিজন-সহ পায় ক্ষয়। ১০।
আপন স্বার্থে ব্যস্ত যা’রা
দুর্দ্দশাতে হয়ই সারা। ১১।
ভ্রান্তি এল সেই-
উৎস-বিমুখ চলন-বলন
বসলো পেয়ে যেই। ১২।
খায় যা’র খসায়ও তা’র
জীবন যায় ব’য়েই ভার। ১৩।
পেতেই শুধু আত্মীয়তা
ঠক-চালাকের এই মূঢ়তা। ১৪।
যা’র খায় তা’কেই মারে
দুঃস্থ-দাপট ধরেই তা’রে। ১৫।
পাওয়ায় খুশি, দেওয়ায় রোষ
চোরাই-ধর্মীর এমনি দোষ। ১৬।
সঙ্গতিহীন কর্জে দান
ব্যর্থতাতেই মুহ্যমান। ১৭।
যোগ্যতা নাই উচ্চে দাবী
বেঘোর পথে খায় সে খাবি। ১৮।
বিশ্লেষণে নিন্দা দেখে
নিজের মরণ নিজেই শেখে। ১৯।
বৃত্তিবাগী আত্মসুখী
ভুলের দালাল ধ্বংসমুখী। ২০।
হীনস্বার্থী প্রবৃত্তিটান
থাকলে যায় না সতের স্থান। ২১।
যে-ভাব হ’তে চাহিস্ ত্রাণ
তা’ হ’তে ঝোঁক ফিরিয়ে আন্। ২২।
কর্ম্মে শিথিল, ভাব-প্রবল
দূষণ-স্বভাব দৈন্যে তল। ২৩।
ইষ্টহারা যা’র গোলা
ভাতে মরে তা’র পোলা। ২৪।
পাপ-স্বভাবের সমর্থনে
পাপমুক্ত হ’তে যাওয়া-
ভণ্ড কথা জানিস্ ওটা
ঝোঁক কিন্তু পাপেই ধাওয়া। ২৫।
মনের মতন না হ’লে যা’র
মনটি ক্রোধে লালে লাল,
দিগ্বিজয়ী দুৰ্দ্দশা তো
দৌড়ে ধরে তা’র নাগাল। ২৬।
ইষ্টানত নয়কো হৃদয়
গুরুত্বে যা’র অভিযান-
হেলন-দলন যা’ পারিস্ কর,
কৃতঘ্ন সেই শয়তান। ২৭।
চাক্ষুষেরে দিয়ে বিদায়
শোনা-কথায় বাঁকে,
দুনিয়ায় সে কেনাবেচায়
ফাঁকিই পেয়ে থাকে। ২৮।
রোশনি চোখে আছে তবু
ভেবেই দেখিস্ তাই,
মনগড়া তোর দেখা হ’তে
পেলি না রেহাই। ২৯।
যে-বৃত্তিকে করবি খাতির
সেই হবে রে শক্তিমান,
তারই হেল্লায় হ’বি রে তুই
ঊর্ধ্ব-অধে অধিষ্ঠান। ৩০।
ভুত-বাতুলি মন যত যা’র
পরিচ্ছন্ন নয় সে তত,
গাধার মত যতই খাটুক
শ্রীহারা হয় স্বভাবতঃ । ৩১।
হামবড়ায়ী অহমিকা
ক্রূদ্ধ অভিমানে ফোলে,
বাধা যা’ তায় করতে নিকাশ
সমর্থনী কাঁদন তোলে। ৩২।
ইতর-কুহকে অনুরাগী হ’য়ে
নীচতায় করে সংস্কার,
মাজাঘসা-নীচু নীচতা তা’দের
সাবাড়েই করে পরিষ্কার। ৩৩।
ইষ্টপ্রীতি নাইকো যাহার
চলে কামের নেশায়,
কামে খোয়ায় ওজঃশক্তি
ধরেই স্নায়ুনাশায়। ৩৪।
কাম, ক্রোধ জানিস্ রে তুই
তখনি দোষের অতি-
ইষ্টস্বার্থ হটিয়ে যবে
লোকের করে ক্ষতি। ৩৫।
ইষ্টপ্রীতি অবসন্ন
স্ত্রী-প্রভাব প্রবল,
বংশ এতে অবশ হ’য়ে
খায় মরণের জল। ৩৬।
উপকারীর ক্ষতি করে
স্বার্থবশে অপবাদ,
দেখ না চেয়ে কৃতঘ্নতা
আছেই ধ’রে তাহার কাঁধ। ৩৭।
ধাপ্পা মেরে অর্থ খেলে
হিত করবার অছিলায়,
দুর্বিপাকে ঘিরেই রাখে
রাখতে বিধি নারেন তা’য়। ৩৮।
উপায় করতে জানল না যে
দিলেও রাখতে পারল না,
পাওয়ার কৰ্ম্ম হারা হ’য়ে
সঞ্চয় করে লাঞ্ছনা। ৩৯।
দিতে চেয়ে স্বার্থনেশায়
করে প্রবঞ্চনা,
দুঃখ তা’রে দারুণ বেগে
দেয়ই রে লাঞ্ছনা। ৪০।
লোকের কথা শুনেই যা’রা
নিন্দা নিয়ে চলে,
বিষাদ-সহ বিপদ তা’দের
পদে-পদেই ফলে। ৪১।